অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আগামি ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সোনালি ব্যাগ উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।

তিনি জানান, সোনালি আঁশ পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত  করে  বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় করার মাধ্যমে পাট চাষিদের সোনালি স্বপ্নপূরণে জোরদার পদক্ষেপ নিচ্ছে  বর্তমান সরকার।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) পাট থেকে সোনালী ব্যাগ বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের জন্য যুক্তরাজ্য এর একটি খ্যাতনামা কোম্পানী Futamura  Chamical Ltd. এর সাথে বিজেএমসির একটি সমোঝতা স্মারক (এমওইউ)ও এনডিএ স্বাক্ষরিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বিজেএমসির পক্ষে সংস্থাটির সচিব এ কে এম তারেক (উপসচিব), এবং Futamura  Chamical Ltd. এর পক্ষে  কোম্পানিটির জেনারেল ম্যানেজার  গ্রিমি কোউলহার্ড।

এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান ড. মো: মাহমুদুল হাসান, বিজেএমসি’র বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহম্মেদ খান, Futamura  Chamical Ltd. এর গ্রুপ ম্যানেজার মার্টিন রির্চাড কক্ রফি, অপারেশন ম্যানেজার এ্যান্ডিউ জেমস ডাক্ উপস্থিত ছিলেন ।

সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত পলিথিনের বিকল্প পচনশীল সোনালি ব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই।

পাটের সুক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। এই ব্যাগ দামে সাশ্রয়ী হবে। এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়লে  ন্যায্য দাম পাবেন কৃষক। অতীতের মতোই, বাংলাদেশ পাট দিয়েই বিশ্বব্যাপি সুপরিচিত হবে।

বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি)’র তত্ত্ববধানে পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগ পাইলট প্রকল্প পর্যায়ে উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি। রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানী জুটমিলে সোনালি ব্যাগ তৈরির প্রাথমিক পাইলট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়।

বর্তমানে বিজেএমসির উদ্যোগে একটি ম্যানুয়েল পাইলট প্ল্যান্ট দিয়ে  সোনালি ব্যাগ তৈরির কাজ করছে। তবে বৃহৎ পরিসরে নতুন উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগ তৈরিতে দেশে বা বিদেশে কোনো মেশিন তৈরি হয়নি। তাই এ ধরনের মেশিন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হয়েছে।

তবে প্রাথমিকভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে মেশিন তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার পলিব্যাগ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। প্রকল্পটি সফলভাবে পরিচালিত হওয়ায় দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে এই পলিব্যাগের উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরির উদ্দেশে পাট থেকে সেলুলোজ আহরণ করা হয়। ওই সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে অন্যান্য পরিবেশবান্ধব দ্রব্যাদির মাধ্যমে কম্পোজিট করে এই ব্যাগ তৈরি করা হয়। উৎপাদিত ব্যাগে ৫০ শতাংশের বেশির ভাগ সেলুলোজ বিদ্যমান।

তাছাড়া এতে অন্য কোনো প্রকার অপচনশীল দ্রব্য ব্যবহার হয় না বিধায় এটি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। আবিষ্কৃত এই ব্যাগের ভার বহন ক্ষমতা পলিথিনের প্রায় দেড়গুণ এবং এটি পলিথিনের মতোই স্বচ্ছ হওয়ায় খাদ্য দ্রব্যাদি ও গার্মেন্টস শিল্পের প্যাকেজিং হিসেবে ব্যবহারের খুবই উপযোগী।

তাছাড়া দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করায় এই ব্যাগের দাম প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের কাছাকাছিই থাকবে। পাট থেকে আবিষ্কৃত পচনশীল পলিব্যাগ এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তা ছাড়া এই ধরনের প্যাকেজিংয়ের বিদেশেও অত্যন্ত চাহিদা রয়েছে।

ফুটামুরা কেমিক্যাল লি. এর কারিগরী সহায়তায় বিজেএমসি পাট থেকে সেলুলোজ উৎপাদনের মাধ্যমে সোনালি ব্যাগ প্রস্তুত ও বাজারজাত করে লাভবান হবে। এ সহযোগিতার ফলে খুব শীঘ্রই পাট থেকে তৈরী সোনালি ব্যাগ বাজারজাত করা সম্ভব হবে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।