নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত একটি পাটের জাত ও ৪টি কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তর কর্মশালা ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ২৪ জানুয়ারী মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এর সম্মেলন কক্ষে বিজেআরআই এর কৃষি গবেষণা উইং কর্তৃক ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে একটি জাত: (১) বিজেআরআই মেস্তা ৪ (সব্জি মেস্তা-২) এবং ৪টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন হস্তান্তর কর্মশালা হয়।

প্রযুক্তিগুলো (১) দেশী পাট বীজের নির্যাস দিয়ে পাটের হলুদ মাকড় দমন, (২) উন্নত শস্য বিন্যাস বোরো-পাট-রোপা আমন; বোরো/পাট-রোপা আমন; বোরো-রোপা পাট-রোপা আমন, (৩) বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) এর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি এবং (৪) স্পেন্ট টি (ব্যবহৃত চা পাতি) দ্বারা পাটের হলুদ মাকড় দমন।

কর্মশালায়ে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বিজেআরআই এর উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোকে মাঠ পর্যায়ে দেখার ইচ্ছা পোষণ করেন। তিনি বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয় সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরিষার জমির পরিমাণ ৬ লক্ষ হেক্টর থেকে ৮ লক্ষ ১৭ হাজার হেক্টর বৃদ্ধি করার উদ্যেগ গ্রহণ করেছে। পাটের প্রযুক্তিগুলো যদি সত্যিকার অর্থে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় তবে পাটের উৎপাদনের ক্ষেত্রে একইভাবে পাটের উৎপাদিত জমি বৃদ্ধি পাবে।”

তিনি পাটের ভ্যারাইটি, প্রোডাক্টস্ এবং টেকনোলজি বৃদ্ধি করার জন্য যা দরকার তা করার জন্য বিজেআরআই-এর বিজ্ঞানীদের আহ্বান জানান। সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর ভিশন পূরণের জন্য বিজ্ঞানীদের কাজ করার আহ্বান জানান এবং একইসাথে বিজেআরআই-এর প্রযুক্তি হস্থান্তর কর্মশালা-২০২৩ কে সাধুবাদ জানান।

উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজেআরআই এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল আউয়াল। তিনি পাটকে গিফট এবং পার্টনার প্রকল্প গণ্য করে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ ও পিএইচডি-তে মনোনয়েনের জন্য বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ারকে অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাটকে কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ থেকে গতবছর ১.০৩ বিলিয়ন ডলার পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগামীতে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে টেকনোলজি নিয়ে কাজ করার জন্য সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন। তিনি পাটের উৎপাদনকে আরো গতিশীল করার জন্য কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে আহ্বান জানান।

এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, মহাব্যবস্থাপক, পাট বীজ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, কৃষি ভবন, দিশকুশা বানিজ্যিক এলাকা, ঢাকা, পরিচালক, সরেজমিন উইং, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।

সহকারি প্রকল্প পরিচালক, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্প পাট অধিদপ্তর, জনাব মোঃ মোসলেম উদ্দিন, পরিচালক (কারিগরী), বিজেআরআই এবং ড. ফেরদৌস আরা দিলরুবা, পরিচালক (জুট টেক্সটাইল), বিজেআরআই।

উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তরের লক্ষ্যে বিজেআরআই এবং পাট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট।

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি তথ্য সার্ভিস, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম, এর বিভিন্ন পর্যায়ের বিজ্ঞানী-কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বীজ কোম্পানী, এনজিও প্রতিনিধি ও কৃষক প্রতিনিধিসহ সর্বমোট: ৭৬ (ছিয়াত্তর) জন অংশগ্রহনকারীর সমম্বয়ে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেন- পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় কিন্ত গুনগত মানের দিক থেকে এবং রপ্তানীতে বাংলাদেশ প্রথম। পাট উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। পাট একটি পরিবেশ বান্ধব ফসল যা পরিবেশে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

এক হেক্টর জমির পাট ফসল ১০০দিনে বাতাস হতে প্রায় ১৫ টন CO2 শোষন করে এবং প্রায় ১১ টন O2 বাতাসে অবমুক্ত করে। পাট পাতা ও শিকড় হেক্টর প্রতি প্রায় ৮ টন জৈব পদার্থ মাটিতে যোগ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পাটের প্রধান মূল মাটির প্রায় ৩০ সে.মি. গভীরে প্রবেশ করে খাদ্যরস গ্রহণ করায় মাটির উপরিভাগের খাদ্যরস যেমন পরবর্তী ফসলের জন্য সংরক্ষিত থাকে তেমনি শক্ত আস্তর (প্লাউ প্যান) ভেঙ্গে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। পাট একটি নিবীড় পরিবেশ রক্ষাকারী (Ecologically Sustainable) ফসল যা মাটির ক্ষয় রোধ এবং স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ