পোষা প্রাণি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আপনার বিড়ালকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে ৫ টি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান যা তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

পোষা প্রাণির প্রতি বাঙালির আকর্ষণ চিরকালের। বিড়াল, কুকুর কিংবা খরগোশ অনেকেই শখের বশে ঘরে পালন করে থাকে। তবে শখের বশে করলেও আদরের পোষা প্রাণিটি যাতে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে তার দিকে খেয়াল রাখা চাই।

বিড়ালের কথাই ধরুন না! প্রথম যখন শখ করে বাসায় নিয়ে আসেন তখন বিড়ালকে কী খাওয়াবেন, কখন, কীভাবে এবং ঠিক কী পরিমাণ খাবার প্রতিদিন দেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন কমবেশি সকলেই৷ বিড়ালের জন্য কোন খাবার স্বাস্থ্যকর, কোন খাবার ক্ষতিকর তা নিয়েও থাকে চিন্তা।

বিড়াল কি খায়?

বিড়ালকে খাওয়াবেন কী, বিড়াল কি খায়, এসবের চিন্তায় আপনিই বরং খাওয়া ভুলে যেতে পারেন। তবে বিড়ালের খাবার নিয়ে সত্যিকার অর্থেই এত চিন্তার প্রয়োজন পড়ে না। বিড়ালের খাবারের রেসিপি খুবই সাধারণ। দামও আহামরি নয়৷ আপনি আপনার সাধ্যের মধ্যে থেকেই বিড়ালকে খাবার দিতে পারবেন।

সুস্বাস্থ্যের জন্য ৫ টি বিড়ালের খাবার তালিকা

বিড়ালকে আপনি নিয়ম করে দুই বেলাই খাবার দিন। এর ফাঁকে বিকেলে নাস্তার জন্য হালকা কিছু খাবার দিতে পারেন। সপ্তাহের খাবার তালিকায় কিছুটা বৈচিত্র্য রাখুন। তাহলে বিড়ালের কাছেও খাবার একঘেঁয়ে হয়ে উঠবে না৷ সপ্তাহের দিনগুলোয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মাছ, মাংস, সবজি, ডিম, ক্যাটফুড দিন। এই লেখায় বিড়ালের সুস্বাস্থ্যের জন্য পাঁচটি পুষ্টিকর খাবারের বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো আমরা।

১/ মাছ

বিড়াল মাছ খেতে পছন্দ করে। এটি বিড়ালের জন্য আদর্শ একটি খাবারও বটে। কারণ বিড়ালের জন্য আমিষই দরকার সবচেয়ে বেশি যা মাছেই পাওয়া যাবে। তবে কোন মাছ আপনার বিড়ালের পছন্দ বা কোন মাছে তার জন্য যথেষ্ট পুষ্টির আয়োজন রয়েছে তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন অনেকেই। এই দ্বিধাদ্বন্দের বেড়াজালে মাছ নির্বাচনে ভুল হওয়ায় বিড়ালের খাবারের প্রতি অরুচি দেখা দেওয়াও অমূলক নয়।

এক্ষেত্রে সহজ সমাধান হচ্ছে চাপিলা মাছ। এই মাছ নির্দ্বিধায় আপনার পোষা বিড়ালকে খাওয়াতে পারেন। চাপিলা নদী এবং সমুদ্র দুই জায়গাতেই পাওয়া যায়৷ তবে সমুদ্রের চাপিলাই বিড়াল বেশি পছন্দ করে থাকে৷ বিড়ালের প্রিয় খাবার হিসেবে এটি বেশ পরিচিত। অন্যান্য মাছের তুলনায় বাজারে চাপিলা সহজলভ্য এবং দামও সাধ্যের মধ্যে থাকায় এটি যে কেউ বিড়ালকে খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে মাছটি সিদ্ধ করে কাঁটা ও আঁশ ছাড়িয়ে নিয়ে ভাতের সাথে মেখে বা ভাত ছাড়াই বিড়ালকে দিতে পারেন।

অন্য মাছের ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। তবে শীতের সময় তেলযুক্ত মাছ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অভিজ্ঞরা। বিড়ালকে একটানা একই মাছ না দেওয়াই ভালো। রুই, কাতলা, নলা, ইলিশ, টাকি, জাটকা, টুনা মাছও বিড়ালের প্রিয়। এগুলোও নিয়মিত বিরতিতে খাওয়াতে পারেন।

এছাড়া স্বাদে ভিন্নতা আনতে আপনি বেছে নিতে পারেন মাছের স্বাদ এবং পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের cat food. এগুলো তে রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান যা আপনার বিড়ালের বাড়তি পুষ্টির চাহিদা পুরুন করবে। যেকোনো অনলাইন পেট শপ থেকে ঘরে বসেই নিয়ে নিতে পারেন আপনার পছন্দের ব্রান্ড টি। সেক্ষেত্রে Thailand এর ব্র্যান্ড স্মার্ট হার্ট খুব ই জনপ্রিয়।

Smart Heart এর খাবার গুলা দেখতে এখানে Click করুন।

২/ মাংস

আপনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন, বিড়াল মাংসাশী প্রাণী। তাই মাংসই ওদের প্রধান খাবার। তাই বলে এরা গরু বা খাসীর মাংস খাবে এমনটা ভাবার কারণ নেই, এসব ওদের স্বাভাবিক খাবারও নয়। বিড়াল সাধারণত ছোট প্রাণিদের মাংস খায়। মুরগির মাংস বিড়ালের পছন্দের খাবার। মুরগীর মাংস ছোট টুকরা করে সেদ্ধ করে খেতে দেবেন।

প্রতিদিনই যে এটা দিতে হবে এমন নয়। তবে চেষ্টা করবেন যাতে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন খাবার তালিকায় মাংস থাকে। মাংস ছাড়া বিড়াল প্রাণির কলিজা খেতে বেশ পছন্দ করে। কলিজায় অবশ্য ভিটামিন ‘এ’ থাকে যা বিড়ালের জন্য উপকারি। তবে কলিজা অতিরিক্ত পরিমাণে দেবেন না। কারণ এতে বিষক্রিয়া হতে পারে, যা বিড়ালের হাড়ের এবং মেরুদণ্ডের ক্ষতি করতে পারে।

তাছারা বার বার ঘরে তৈরি মাংসের স্বাদ নিতে নিতে আপনার বিড়ালের একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে তাকে দিতে পারেন বিভিন্ন ধরনের মাংসের তৈরি cat food. যা তার স্বাদে ভিন্নতা আনবে এবং পুষ্টির চাহিদা ও পুরুন করবে। এখত্রে বিড়াল প্রেমিদের পছন্দের তালিকায় আছে Indian ব্র্যান্ড ডুরুলস।

Drools Brand এর খাবার গুলা দেখতে এখানে Click করুন।

৩/ সবজি

মাংসাশী প্রাণী হিসেবে মাংস জাতীয় খাবারেই বিড়ালের ঝোঁক বেশি থাকে। তবে তার মানে এই নয় যে তাকে উদ্ভিজ্জ খাবার দেওয়া যাবে না। হজমের সুবিধাসহ নানা পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনায় রেখে বিড়ালকে নিয়মিত সবজি খাওয়ানোতে অভ্যস্ত করে তোলা জরুরি।

অল্প পরিমানে ব্রকলি সেদ্ধ করে বিড়ালকে খাওয়ানো যেতে পারে যা তাদের খাদ্য হজমে সাহায্য করবে। পালংশাক ও খাওয়াতে পারেন। তবে কিডনির সমস্যা থাকলে তা থেকে দূরে রাখতে হবে।

মিষ্টি কুমড়া, পেপে বা গাজর সিদ্ধ করে ভাতের সাথে বা ভাত ছাড়াই বিড়ালকে দিতে পারেন। বাড়িতে ঘাস রাখতে পারেন। প্রয়োজন হলে বিড়াল ঘাসও খায়। এতে করে লাভ হচ্ছে, বিষাক্ত পদার্থ ঘাসের সঙ্গে বমি করে বের করে দিতে পারে। তরমুজ কিংবা কলা অনেক বিড়ালই পছন্দ করে। আপনিও দুয়েকদিন দিয়ে দেখতে পারেন। যদি আগ্রহ দেখেন, তাহলে নিয়মিত বা প্রায়ই এগুলো দিতে পারেন।

৪/ ডিম

ডিমে আছে আমিষ ও প্রোটিন যা বিড়ালের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি। ডিমের সাদা অংশে থাকা গ্লোবিউলিন এবং কুসুমে থাকা অ্যালবিউমিন বিড়ালের শারীরিক বৃদ্ধিতেও অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

তাই মাঝে মাঝেই আপনার বিড়ালকে আপনি রান্না করা সিদ্ধ ডিম খেতে দিতে পারেন। তবে কখনোই আপনার বিড়ালকে কাঁচা ডিম খেতে দেবেন না। কারণ কাঁচা ডিমে থাকা সালমোনেলা বা ই. কোলাই নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা বিড়ালের পাকস্থলীতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

৫/ ক্যাটফুড

বিড়ালকে ঘরোয়া খাবারে অভ্যস্ত করে তোলা ভালো। এর বাইরে ক্যাটফুড দিতে পারেন তবে তা নিয়মিত প্রধান খাবার হিসেবে না দেওয়াই ভালো৷

বিড়ালের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মূল খাবারের পাশাপাশি বিকেল বা সন্ধ্যায় নাস্তা হিসেবে বিড়ালকে ক্যাটফুড দিতে পারেন।

অনেকে ক্যাটফুড কোনটি বিড়ালকে খাওয়াবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। এক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই। আপনার বিড়ালের যদি শারীরিক কোনো অসুস্থতা না থাকে তাহলে তাকে সব ধরনের ক্যাটফুডই (ড্রাই, ওয়েট, কিটেন ইত্যাদি) দিতে পারবেন।

বিড়ালকে যে খাবারই দিন না কেন পানির বিষয়টি খেয়াল রাখুন। তাদের জন্য পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা রাখুন। নিয়মিত পানি বদলে দিন। তবে নির্দিষ্ট পানির বদলে ও অন্য কোথাও থেকে পানি খেতে আগ্রহীও হতে পারে। যে পাত্রে খাবার ও পানি দেবেন তা নিয়মিত পরিস্কার রাখার চেষ্টা করুন।

মনে রাখবেন, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মাছ-মাংস বা প্রাণিজ পণ্য, আঙুর, চকলেট, চা, কফি, চিনি, অ্যালকোহল বিড়ালকে দেওয়া যাবে না। কাঁচা দুধও না দেওয়াই ভালো। বিড়ালের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার গুরুত্ব বিবেচনা করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত।