সাহেদুল আলম রোকন, নাটোর প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বোরো ক্ষেতে পুতে রাখা ডাল, বাঁশ অথবা কঞ্চি। সেখানে বসছে একাধিক পাখি। ধান ক্ষেতে ক্ষতি করা পোকা মাকড় দেখা মাত্র খেয়ে ফেলছে বসে থাকা পাখিগুলো। উপকার হচ্ছে ধানক্ষেতের।

নাটোর জেলার বোরো ক্ষেতে এমন দৃশ্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। পোকা-মাকড় রোধে কৃষকরা ব্যবহার করছেন এই পার্চিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কৃষকের আস্থা বাড়ছে। এছাড়াও উপকারের পাশাপাশি খরচও কমছে।

এদিকে এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর দেশের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সারাদেশে বোরোর ক্ষেতে পাখি বসার স্থান তৈরী করে পাখির মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা মাকড় নিধণে এই পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন কৃষকেরা।

নাটোর জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কৃষক, এমনটাই জানিয়েছে কৃষি অফিস।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৫ হাজার ৫৩৯ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৬১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও পদ্ধতির। এক্ষেত্রে পার্চিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ।

জমিতে ধঞ্চে গাছ লাগিয়ে বা অন্য কোন গাছের শুকনো ডাল বা বাঁশ-কঞ্চি ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থান পাখি বসার ব্যবস্থা হলো পার্চিং। এটি বালাই ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পরিবেশবান্ধব কৌশল। সাধারনত ফসলের চেয়ে এক ফুট বেশি উচ্চতায় প্রতি পাঁচ শতক জমিতে পাখি বসার একটি জায়গা তৈরী করে দেওয়া হয়।

ধানের জমিতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের সংখ্যাই বেশি। পাখি এসব কীটপতঙ্গ খেয়ে ক্ষতিকর পোকার সংখ্যা কমিয়ে রাখার পাশাপাশি বংশ বিস্তার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ক্ষতিকর পোকার মধ্যে উল্লেযোগ্য-মাজরা পোকার, লেদাপোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, ঘাসফড়িং,উরচুঙ্গা, কীড়া, ফড়িং ও বিভিন্ন বিটল পোকা।

নাটোর জেলায় মোট বোরো চাষের ৬১ হাজার ২০০ হেক্টর জমির মধ্যে ৪৯ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমিতে কৃষকরা পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে সিংড়া উপজেলায় সর্বাধিক ২৯ হাজার ৭১৪ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৬ হাজার ৩৫০ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর,  গুরুদাসপুরে ৩ হাজার ৮২০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮৩৫ হেক্টর, লালপুরে ১ হাজার ২০০ হেক্টর এবং বাগাতিপাড়ায় ৭৪০ হেক্টর।

পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে জেলার কৃষি বিভাগ বোরো চাষের শুরুতে কৃষকদের নিয়ে পার্চিং উৎসব করে থাকে। তাছাড়া কৃষক সমাবেশে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পার্চিংয়ের প্রায়োগিক দিক ও এর উপকারিতা সম্পর্কে অবহিত ও উদ্বুদ্ধ করেন।

হালতিবিলের কৃষক বেলাল এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, বরাবরের মতোই এবারো তিনি পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে দুই বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন। এতে অনেক ক্ষতিকর পোকার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাগাতিপাড়ার মাধববাড়িয়া এলাকার কৃষক শুকচান জানান, পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে ফলন ভালো পাওয়া যায়। অর্থও কিছুটা বাঁচে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, পার্চিংসহ অন্যান্য প্রযুক্তি ও পদ্ধতি কৃষকদের অবহিত ও উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বোরো ধান উৎপাদনে নিরলসভাবে কাজ করছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের অপব্যবহার রোধ হওয়ার পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, জানান এ কর্মকর্তা।