ব্রির শততম জাত উদ্ভাবনের

কৃষিবিদ এম. আব্দুল মোমিন: ব্রির শততম জাত উদ্ভাবনের মাইলফলক অর্জন হয়েছে। ধানের উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাত উদ্ভাবনে অনন্য রেকর্ড স্থাপন করলো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বিজ্ঞানীরা।

জাতীয় বীজবোর্ডের সর্বশেষ সভায় নতুন অনুমোদিত তিনটি ধানের জাতসহ বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত ধানের উফশী জাতের সংখ্যা সর্বমোট একশটি।



আগে উদ্ভাবিত ৯১টি ইনব্রিড ও ৬টি হাইব্রিড জাতের সাথে ব্রির সাফল্যের পালকে যুক্ত হলো আরো নতুন তিনটি জাত।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে জাতীয় বীজবোর্ডের শততম সভায় অনুমোদিত নতুন তিনটি জাত ব্রি ধান৯৩, ব্রি ধান৯৪ ও এবং ব্রি ধান৯৫ সহ জাত উদ্ভাবনে সেঞ্চুরি পূর্ণ করল ব্রি।

১৯৭০ সালের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত দেশের খাদ্য নিরাপত্তার অতন্দ্র প্রহরী এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। ধান বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও গত এক দশকে উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে ব্রি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের নানামূখী উদ্যোগের কারণে গত তিন মেয়াদে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ব্রি চারটি হাইব্রিডসহ আউশ, আমন ও বোরো ধানের সর্বমোট ৫০টি জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।

যার প্রতিটিই কোন না কোন বিশেষ গুনাগুণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। যেমন- খরা, বন্যা, লবণ সহিঞ্চু, জিংক সমৃদ্ধ, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি, ডায়াবেটিক রাইসসহ অধিক উচ্চফলনশীল।

ব্রি উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের ফলে বর্তমানে চালের উৎপাদন প্রতি বছর গড়ে ৪.৮৮ লক্ষ টন হারে বাড়েছে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত আছে।

বিশ্বে ধানের গড় ফলনের দিক থেকে বাংলাদেশ ধাপে ধাপে শীর্ষ স্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সত্তরের দশকে এদেশে ধানের  ফলন ছিল হেক্টর প্রতি ২ টনেরও নীচে; বর্তমানে ধানের গড় ফলন প্রায় ৫ টন/হে.।

এই ফলন বাৎসরিক উৎপাদনশীলতার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে এবং বিশ্বমানের কাছাকাছি।

নতুন অনুমোদিত ব্রি ধান৯৩ স্বর্ণা-৫ এর বিশুদ্ধ সারি। এটি রোপা আমন মৌসুমের জাত। এর গাছের উচ্চতা ১২৭ সে.মি. এবং জীবনকাল ১৩৭ দিন।  ব্রি ধান৯৩ এর ফলন ফলন ৫.৫-৬.৫ টন/হেক্টর।

এর ১০০০টি দানার ওজন ১৯.০ গ্রাম। ধানের দানার রং লালচে ও চাল মাঝারি মোটা ও সাদা।

নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান৯৪  রনজিত স্বর্ণা-র বিশুদ্ধ সারি। এটিও রোপা আমন মৌসুমের জাত। এর গাছের উচ্চতা ১১৭ সে.মি.। জীবনকাল ১৩৮ দিন। ফলন ৫.৫-৬.৫ টন/হেক্টর। ১০০০ দানার ওজন ১৮.৬ গ্রাম। ধানের দানার রং লালচে। চাল মাঝারি মোটা ও সাদা।

ব্রি ধান৯৫ স্বর্ণা-র সাথে সংকরায়ন করে উদ্ভাবিত বাছাইকৃত সারি। এটিও রোপা আমন মৌসুমের জাত। এর গাছের উচ্চতা ১২০ সে.মি.। জীবনকাল ১২৫ দিন। ফলন ৫.৫-৬.০ টন/হেক্টর। ১০০০ দানার ওজন ২১.৫ গ্রাম। ধানের দানার রং গাঢ় লাল। চাল মাঝারি মোটা ও সাদা।

দেশের উত্তরাঞ্চলের স্বর্ণা অধ্যুষিত এলাকায় এই জাতগুলো জনপ্রিয়তা পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা

নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে পুরাতন জাতগুলোকে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা গেলে বাড়তি জনসংখ্যার বিপরীতে বর্ধিত খাদ্য উৎপাদন সম্ভব।

ব্রির শততম জাত উদ্ভাবনের মাইলফলক অর্জন শিরোনামে লেখাটি লিখেছেন ব্রির Senior Liaison Officer কৃষিবিদ এম. আব্দুল মোমিন।

আরও পড়ুন: নবীন কৃষি কর্মকর্তাদের বেশি বেশি মাঠ পরিদর্শনের তাগিদ কৃষিমন্ত্রীর