শীর্ষ চাল আমদানিকারক হতে

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভারতের কারণে চালের বিকল্প উৎস খুঁজছে আমদানিকারকরা। দেশটি নন-বাসমতি চালে ২০ শতাংশ রফতানি শুল্ক আরোপ করায় বিপাকে পড়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স।

এদিকে সরকারের নতুন এসব সিদ্ধান্তের পর ভারতের ব্যবসায়ীরা চলতি সপ্তাহের এখন পর্যন্ত চাল রফতানিতে নতুন কোনো চুক্তি করেনি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত ভাঙা চাল রফতানি বন্ধ ঘোষণা করার পর থেকে বিশ্ববাজারে শস্যটির সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি দেশটি চালের রফতানি শুল্ক ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করায় বৈশ্বিক ক্রেতারা বিকল্প উৎস থেকে চাল আমদানিতে ঝুঁকছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যয় ও লোকসানের আশঙ্কায় তারা এ শুল্ক প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতির সুযোগে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ অন্যান্য চাল রফতানিকারক দেশগুলো চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতের বিকল্প হিসেবে এসব দেশকে বেছে নিচ্ছেন আমদানিকারকরা।

গত সপ্তাহে ভারত ভাঙা চাল রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। পাশাপাশি নন-বাসমতি চালের ওপর ২০ শতাংশ রফতানি শুল্ক আরোপ করা হয়। স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, অপর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে ভারতে ধান আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে উৎপাদন ব্যাপক কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ধারণা ঠিক হলে দেশে উৎপাদিত চালের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাবে ভারত। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে দেশটি ভাঙা চাল বন্ধ ঘোষণা করেছে। আর নন-বাসমতি চাল রফতানি নিরুৎসাহিত করতে আরোপ করা হয়েছে অতিমাত্রায় রফতানি শুল্ক। এতে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে দাবি সরকারসংশ্লিষ্টদের।

রফতানি নীতিতে পরিবর্তন আনার পর পরই ভারতের বন্দরগুলোয় চাল লোডিং বন্ধ হয়ে যায়। আটকা পড়ে ১০ লাখ টনেরও বেশি চাল। ক্রেতারা নতুন করে আরোপিত শুল্ক পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান।

একটি গ্লোবাল ট্রেডিং ফার্মের মুম্বাইভিত্তিক এক ডিলার বলেন, চাল রফতানি বন্ধ ঘোষণার কারণে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বিশ্ববাজার। ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির অধীনে চাল রফতানি করার বিকল্প উপায় খুঁজছেন। চলতি সপ্তাহে ভারতের ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চালের দাম দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৩৮৫-৩৯২ ডলারে। গত সপ্তাহে যা ছিল ৩৭৯-৩৮৭ ডলার। চলতি বছর দেশটির চাল রফতানি এক-চতুর্থাংশ কমে যেতে পারে। কারণ ক্রেতারা এরই মধ্যে তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে অন্যান্য উৎস থেকে চাল আমদানিতে ঝুঁকছেন।

তথ্য বলছে, চলতি সপ্তাহে ভিয়েতনামের ৫ শতাংশ ভাঙা চাল বেচাকেনা হচ্ছে ৪০০-৪১০ ডলারে। এর আগের সপ্তাহে দাম ছিল ৩৯০-৩৯৩ ডলার। এক ব্যবসায়ী জানান, ভারতের রফতানি বন্ধ ও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর ভিয়েতনামের চালের দাম বেড়েছে। কিন্তু এর পরও দেশটির চাল রফতানিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ভিয়েতনামের রফতানিকারকরা চাল রফতানিতে নতুন চুক্তি করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করছেন না। কারণ তাদের প্রত্যাশা, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম আরো বাড়বে। এদিকে থাইল্যান্ডের ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম বেড়ে টনপ্রতি ৪২৫-৪৩৫ ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৪১৬-৩২০ ডলার।

ব্যাংককভিত্তিক এক ব্যবসায়ী বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত, বন্যা ও পরিবহন সমস্যার কারণে চাল সরবরাহের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। তবে ভারতের রফতানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ায় অনেক গ্রাহক দেশের এখনো থাইল্যান্ড থেকে আমদানি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির পর চাল আমদানির লক্ষ্যে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে বাংলাদেশ। মোট আমদানি করা হবে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন।

এগ্রিকেয়ার/ এমএইচ