নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধের পর ভারত থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারও চাল আমদানি শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে চালবোঝাই তিনটি ট্রাক হিলি স্থলবন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়।

মন্ত্রণালয়ের আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) না থাকায় গত বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সব প্রকার চাল আমদানি বন্ধ ছিল। এরপর থেকে দেশে চালের দাম বেশি হওয়ায় আবারও সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।

হিলি বাজারের চাল ব্যবসায়ী সামসুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ ছিল। এর কারণে দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে ভারতীয় চাল আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম কিছুটা কমতে পারে।

পড়তে পারেন: চালের বস্তায় বাড়লো ৩০০ টাকা

হিলি বন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাব মল্লিক বলেন, নয় মাস বন্ধের পরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এর আগে গেল বছর ৩১ অক্টোবর শেষবারের মতো চাল আসে বন্দরে। বর্তমানে চাল আমদানি অব্যাহত থাকবে এবং তা দ্রুত খালাস করে দেশের বাজারে ছাড়তে বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

জুলাইয়ে বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৯ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে ৯৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন এবং আতপ চাল ৩০ হাজার টন। চালে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙা দানা থাকতে পারবে।

অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে আমদানির অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। তারপর চাল আমদানি শুরু হয়।

সেই চাল আমদানির শর্তে বলা হয়েছে, ২১ জুলাইয়ের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট-ঋণপত্র) খুলতে হবে এবং এ-সংক্রান্ত তথ্য (বিল অব এন্ট্রিসহ) খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলে তাত্ক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।

পড়তে পারেন: বেড়েছে চাল পেঁয়াজ তেলের দাম

বরাদ্দ পাওয়া আমদানিকারকদের আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ গুদামজাত ও বাজারজাতের তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানাতে হবে।

বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু/জারি করা যাবে না। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের নামে ফের প্যাকেটজাত করা যাবে না। আমদানি করা বস্তায় চাল বিক্রি করতে হবে বলেও শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া প্লাস্টিকের বস্তায় আমদানি করা চাল বিক্রি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্ত দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

পড়তে পারেন: ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ ভাঙা চাল কিনছে চীন

অনেক দিন ধরেই অস্থিতিশীল চালের বাজার। ভরা বোরো মৌসুমেও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। গরিবের মোটা চাল কেজিপ্রতি দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। চিকন চালের কেজি ৬৫ থেকে ৮০ টাকা।

এ প্রেক্ষাপটে দাম স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৩ জুন চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্ক ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে চাল আমদানিতে মোট করভার ৬২ শতাংশ থেকে কমে ২৫ শতাংশে নামানো হয়।

নতুন শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ শুল্ক ছাড়ের অনুমোদন পেতে আমদানিকারককে অবশ্যই খাদ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি নেয়ার শর্তজুড়ে দিয়েছে এনবিআর। কমানো শুল্কহারে চাল আমদানির জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো ১৭ জুলাই পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ