নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনার থাবা সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। অলস সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে অলস সময় পার করছেন। ঠিক এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভোলাহাটের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছেন অনলাইন আম ব্যবসায়।

এখানকার আম দেশের বিভিন্ন জায়গায় কুরিয়ারের মাধ্যমে সরবরাহ করছেন তারা। এতে বিভিন্ন জায়গার ভোক্তারা মানসম্মত আম চাহিদা মত পেয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে বসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানুষের কাছে আমের পরিচিতি থাকলেও বিভিন্ন জায়গার মানুষ আমের জাত চিনেন না। ফলে আশ্বিনা আমকে ফজলি আম বলে বিক্রি করেন। আবার গুটি আমকে খিরসাপাত বা গোপালভোগ বলে বেশি দামে বিক্রি করে ভোক্তাদের প্রতারিত করেন। ভোক্তাদের সুবিধার্থে আসল আমের স্বাদ দিতেই তাদের এ আয়োজন।

অনলাইন ব্যবসায় যে আম ক্রেতা চাইবেন সে জাতের আমযত্নসহকারে সরবরাহ করছেন। এতে বেকার শিক্ষার্থীরা কাজের মধ্যে থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তেমনি অপরাধমুক্ত থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।

ভোলাহাট উপজেলার একমাত্র আমের বাজার আম ফাউন্ডেশনে গিয়ে চোখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অনার্স পড়ুয়া বেশ কজন শিক্ষার্থী আম সরবরাহ করতে প্যাকেট করে ওজন করছেন। কেউ আবার প্যাকেটের উপর ঠিকানা লিখতে ব্যস্ত। তাঁদের ব্যস্ততা শেষ হলে কথা হয় তাদের সাথে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ হাসিবুর রহমান জানান, করোনায় দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বেকার হয়ে বাবা-মায়ের বোঝা হয়ে বাড়িতে বসে। তাই ভাবলাম অনলাইনে ব্যবসাটা শুরু করি। যেহেতু ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়া-লেখা করছি সেহেতু ব্যবসার অভিজ্ঞতা হোক। একদিন উদ্যাক্তা হওয়ার ইচ্ছে থেকেই পূর্ব অভিজ্ঞতা নিয়েই লেগে পড়েছি। তাছাড়া বেকার বসে বসে বাবার অর্থ নষ্ট না করে যা আয় হয়।

তিনি আরও বলেন, গত ২৫ মে থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ প্রজাতির আম দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতে পেরেছি।

এদিকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মোঃ দিদার তলহী জানান, করোনায় প্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ। বেকারত্বের জায়গা থেকে যখন হতাশ জীবন যাপন করছিলাম। ঠিক তখন আমের মৌসুম শুরু হয়েছে। ভাবলাম দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভোলাহাটের সুমিষ্ট আম ক্রয় করতে গিয়ে অন্য অঞ্চলের আম দিয়ে অসাধু আমব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ঠকায়। সে সব ক্রেতা সুস্বাদু আম না পেয়ে ভোলাহাটের বদনাম করেন। ক্রেতারা যেন এমন প্রতারনার শিকার না হন ভোলাহাটের মানক্ষুন্ন না হয় সে জন্য অনলাইনে আম বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এতে প্রকৃত আম পাবেন ক্রেতা, ভোলাহাটের মানক্ষুন্ন হবে না এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবো আমরা। এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৭০ মণ আম সুষ্ঠুভাবে সরবরাহ করতে পেরেছি।

রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ ফাহিম বলেন, আমরা করোনায় বেকার বসে থাকা অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন আম ব্যবসায় জড়িয়েছি। বেকার বাড়িতে বসে না থেকে আম ব্যবসা করছি। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আম সরবরাহ করতে কুরিয়ার মাধ্যম ব্যবহার করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় কুরিয়ার সার্ভিসগুলো অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও সঠিক সময়ে সরবরাহ করছে না। এতে কিছুটা ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়।

অনলাইন আম ব্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঢাকার মিরপুরের মোঃ মামুন ৩ মণ আম ক্রয় করেছেন। তিনি বলেন, অনলাইনে আম ক্রয় করেছি। যে ভাবে আম চেয়েছি চাহিদা মত আম পেয়েছি। এভাবে আম পেলে কোন ভোক্তা প্রতারিত হবে না বলেও জানান তিনি।

অপর একজন ক্রেতা পাবনার টেবুনিয়ার রিয়াল বলেন, আমি অনলাইনে ৩০ কেজি আমের চাহিদা দিয়ে টাকা বিকাশে পাঠিয়েছিলাম। সারাদেশে বিভিন্ন ভাবে মালামাল দেয়ার কথা বলে টাকা প্রতারনা করে । এমনি প্রতারনার ফাঁদে পড়লাম কিনা। কিন্তু না সুষ্ঠুভাবে চাহিদা মত আম পেয়েছি।

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষতিবাদে ৩২ হাজার ৭৬৪ হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ২৮৫ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হয়েছিলো। যেখানে আমের গড় মূল্যে ছিলো প্রতিকেজি ৫৮ টাকা।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ