নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সারাদেশে প্রাণিসম্পদের বিস্তৃতির মাধ্যমে সুস্বাদু মাংস বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

আজ শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী ২০২৩ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে সারাদেশে প্রাণিসম্পদকে বিস্তৃত করে সুস্বাদু মাংস আমরা বিদেশে রপ্তানি করবো। এ জন্য প্রস্তুতি হিসাবে রোগমুক্ত গবাদিপশু উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে প্রতিটি উপজেলায় ভ্রাম্যমান ক্লিনিক করে দেওয়া হয়েছে। প্রাণীর কাছে হাসপাতাল পৌঁছে যাবে, প্রাণীকে হাসপাতালে আসতে হবে না।

দেশে উৎপাদিত মাংস নিরাপদ উল্লেখ করে এসময় মন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে কিছু লোক বলল ফার্মের মুরগি ক্ষতিকর। এগুলো খাওয়া যাবে না। কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে ব্রয়লার মুরগি কোনভাবেই মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়।

তিনি বলেন, গবেষণা মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সুবর্ণ মুরগি উদ্ভাবন করেছে, যার স্বাদ, গন্ধ, রং দেশি মুরগির মতো। দেশে উৎপাদিত দুধ, ডিম, মাংস ক্ষতিকর কিনা তা পরীক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ খাত বিকশিত হওয়ায় বেকারত্ব লাঘব হয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগকারীরা উদ্যোক্তা হয়ে গর্বের সাথে বলেন, আমি বেকার না, আমি উদ্যোক্তা, আমার খামার আছে। এভাবে আমরা পোল্ট্রি, ডেইরি তথা লাইভস্টক খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যার সূচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার নেতৃত্বেই সর্বপ্রথম উন্নত প্রজাতির গবাদিপশু দেশে আনা হয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আরও বলেন, একটা সময় কোরবানির আগে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো, ভারত-মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু না আসলে কোরবানি করা সম্ভব হবে না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রধানত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায় এবং তার সরকারের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাণিসম্পদ খাত আজ বিকশিত হয়েছে।

তিনি জানান, এখন আর বিদেশ নির্ভর নয় বরং কোরবানির সময় বাজারে এক দশমাংশ পশু অবিক্রিত থাকে। এ সাফল্য হঠাৎ করে আসেনি। এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করা, অনুপ্রাণিত করা ও সহায়তা করায় রাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল।

মানুষের মৌলিক চাহিদার একটা অংশ খাবারের নিশ্চয়তা প্রাণিসম্পদ খাত থেকে আসছে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকার মানুষের খাবারের চাহিদা মিটিয়েছে, উৎপাদনকারীদের সহায়তা করেছে, বিপণন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে। করোনার মধ্যে ভ্রাম্যমান বিক্রয়ে অভাবনীয় সাফল্য ছিল। মানুষের দোরগোড়ায় দুধ, ডিম, মাছ, মাংস বিক্রয় করা হয়েছে। রমজানে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস ব্যবস্থা বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি জানান, পোল্ট্রি ফিড, অ্যানিমেল ফিডসহ এ খাতে যারা অন্য কারখানা করতে চায়, বিদেশ থেকে তাদের যে উপাদান আনতে হয় তার উপর কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতে যারা দেশে কারখানা স্থাপন করতে চায় তাদের মেশিনারিজ আমদানির উপর শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। স্বল্প সুদে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে খামারিদের কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে যেখানে যে সহযোগিতা দরকার, শেখ হাসিনা সরকার পাশে রয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি খাত সম্মিলিতভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, সরকার প্রাণিসম্পদ খাতের খামারি ও উদ্যোক্তাদের পাশে আছে। প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ঘুরলে বোঝা যাবে এ খাতে কত বিস্ময়কর বিপ্লব হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন প্রমুখ।

এর আগে মন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে ঢাকায় আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ২০২৩ এর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন এবং খামারিদের সাথে মতবিনিময় করেন।