নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের ৬০ শতাংশ আসে মাছ থেকে। গত তিন যুগে দেশে মাছের উৎপাদন ৬ গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

মন্ত্রী আরো বলেন, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় খাবারের বড় যোগান তৈরি হচ্ছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। বেকারত্ব দূর হচ্ছে। মাছ রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করায় জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে”-যোগ করেন মন্ত্রী।

গতকাল শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকালে পিরোজপুর সার্কিট হাউজে মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের জেলা পর্যায়ের সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। পিরোজপুর জেলা মৎস্য অফিস ও ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।

সেমিনারে মন্ত্রী আরো বলেন, “একসময় ইলিশ এতটাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে গিয়েছিল যে বাচ্চাদের ছবি একে দেখাতে হতো ইলিশ নামে একটা মাছ ছিল। অর্থাৎ ইলিশ হারিয়ে যাচ্ছিল। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জোরালো অবস্থান নিয়েছে। মা ইলিশ ও জাটকা আহরণ বন্ধ থাকাকালে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। আকাশপথে মনিটরিং করে ইলিশ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি। ইলিশের জন্য গবেষণাগার তৈরি হয়েছে। অভয়াশ্রম করা হয়েছে। ইলিশ সম্পদ ধ্বংসের চেষ্টা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে”।

তিনি আরো বলেন, “আমাদের একটা স্বপ্নের জায়গা হচ্ছে ইলিশ। এজন্য সরকারের উদ্যোগে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ইলিশের স্বাদ, গন্ধ আমরা সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর পানি দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত ড্রেজিং এসব কারণে ইলিশের প্রজনন ও বিচরণ বিভিন্নভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ কারণে কোনো কোনো সময় ইলিশ স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বিষয়টি আমরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। এ বছর অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বড় আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। একদিকে ইলিশের পরিমাণ বাড়ছে, অপরদিকে ইলিশের আকার বাড়ছে। গন্ধও ফিরে আসছে। এসব কিছু সরকারের সুন্দর ব্যবস্থাপনার কারণে সম্ভব হয়েছে। এর কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার”।

ইলিশ সম্পদ উন্নয়নসহ দেশের মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে সম্মিলিত ভূমিকা রাখার জন্য এসময় সকলকে আহ্বান জানান মন্ত্রী। মাছ থেকে নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনের উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। মাছের খাবারের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী। মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট শিল্প স্থাপনে কর রেয়াতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য দপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার, পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হাকিম হাওলাদার এবং ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী। পিরোজপুরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী, পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান ফুলু, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ পিরোজপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক শিকদার চান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের চমৎকার ব্যবস্থাপনায় ইলিশের উৎপাদন এখন বিশ্বের বিস্ময় সংবাদের তথ্য নিশ্চিত করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ ইফতেখার হোসেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ