নওগাঁ প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির জৈব পদার্থ কার্বন প্রতিনিয়ত কমছে। একই সঙ্গে কমছে মাটির উর্বরতা। এ অবস্থায় মাটির উর্বরতা শক্তি ধরে রাখতে নওগাঁয় ‘কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার’ বা ‘বায়োচার ইনরিচ ফার্টিলাইজার’ কৃষকের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে।
এ অবস্থায় ফসল উৎপাদন ঠিক রাখতে প্রতিবছরই বাড়াতে হচ্ছে রাসায়নিক সারের ব্যবহার। এতে অধিক পরিমাণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ফসলের উৎপাদন ব্যয় ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহারে যেমন কমছে ফসলের উৎপাদন খরচ, তেমনি কমছে স্ব্যাস্থঝুঁকিও।
একসময় জমিতে শুধুমাত্র ইউরিয়া সার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতেন কৃষকরা। উৎপাদন ঠিক রাখতে কৃষকরা জমিতে পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করছেন ফসফেট, ডিএপি, পটাশ (এমওপি) ও জিপসাম। বর্তমানে এসব সারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জিংক ও বোরন। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকের ব্যবহার।
নেদারল্যান্ড ভিত্তিক সাহায্য সংস্থা আইসিসিও এবং কার্ক ইন এক্টাই এর সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়কারী সংস্থা সিসিডিবির উদ্যোগে নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের হাজী গোবিন্দপুর গ্রামে চলতি রবি মৌসুমে জমিতে ‘বায়োচার’ ব্যবহার করে বেশকিছু প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেছেন কৃষকরা।
আলু, পেঁয়াজ, মরিচ, ফুলকপি ও বাধাকপির এসব প্লটের সবজি সবুজ-সতেজ হতে শুরু করেছে। বায়োচারের স্বক্ষমতা পরীক্ষা করতে কৃষকরা একই জমির অন্য অংশে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে একই ফসলের চাষও করেছেন। রাসায়নিক সারের তুলনায় বায়োচার ব্যবহার অংশের চারা সতেজ ও শক্তিশালী আকার ধারণ করেছে।
গতকাল বুধবার (২৫ নভেম্বর ২০২০) বেলা ১১টার দিকে এসব প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করেন নেদারল্যান্ড ভিত্তিক সাহায্য সংস্থা আইসিসিও এবং কার্ক ইন এক্টাই এর হেড অফ প্রোগ্রাম-সাউথ এশিয়ার আবুল কালাম আজাদ, মান্দা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, সিসিডিবির বায়োচার প্রজেক্টের কৃষ্ণ কুমার সিংহ, এ্যাডলিনা রিচেল বৈদ্য ও মালিহা আক্তার, সিসিডিবি এরিয়া ম্যানেজার দরকা সেন, ইয়ূথ প্রজেক্ট ম্যানেজার নুসরাত জাহান প্রমুখ।
প্রদর্শনী প্লটের কৃষক আজাহার উদ্দিন, দুলাল হোসেন, ওয়াজেদ আলীসহ আরও অনেকে জানান, ফসলের উৎপাদনমাত্রা ধরে রাখতে জমিতে অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হচ্ছে। জমিতে প্রতিবছরই বিভিন্ন ধরণের সারের পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে তাদের।
এ অবস্থায় বেসরকারি সংস্থা সিসিডিবির উদ্যোগে জমিতে তারা ‘বায়োচার ইনরিচ ফার্টিলাইজার’ ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগও তাদের সার্বিক সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
মাটির উর্বরতা ধরে রাখতে কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর অতিরিক্ত উপপরিচালক গোলাম ফারুক হোসেন বলেন, অধিকহারে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির জৈব পদার্থ কার্বন দিনদিন কমে যাচ্ছে। ক্রমশ হ্রাস পাওয়া মাটিতে পরপর ‘বায়োচার ইনরিচ ফার্টিলাইজার’ বা ‘কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার’ ব্যবহারে কার্বন বৃদ্ধি পাবে। এটির ব্যবহারে মাটির স্থায়ীত্বশীল স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যাপক ভ‚মিকা রাখবে । ফলে কম রাসায়নিক সার ব্যবহার করেও কৃষকরা কাংখিত ফলাফল লাভ করবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।