মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দফায় দফায় কীটনাশক প্রয়োগের পরও কোন কাজে আসছে না। পোকার আক্রমণ ঠেকাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। নওগাঁর মান্দায় ভেজাল ও নিম্নমানের কীটনাশকে বাজার সয়লাব হওয়ার কারনেই এমন ভোগান্তি বলে অভিযোগ তাদের।

কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক ভেজাল ও নিম্নমানের হওয়ায় জমি থেকে পোকা সরানো যাচ্ছে না। খেতের মাজরা ও পাতা মোড়ানো পোকা সরাতে অনেক কৃষককে এরই মধ্যে জমিতে ৩ বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। আগামিতে পচন ও কারেন্ট পোকা রোধে কয়েকদফা স্প্রে দিতে হবে। এতে ধানের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। ফলন বিপর্যয়েরও আশঙ্কা রয়েছে।

তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষকদের এখন চরম সংকটময় অবস্থা চলছে। এসময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কোন সহায়তা ও পরামর্শ পাচ্ছেন না। মাঠে কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও দাবি করেন কৃষকেরা।

উপজেলার নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, ধান গাছের বয়স চলছে ৪৫ থেকে ৫০ দিন। এরই মধ্যে পাতা মোড়ানো ও মাজরা পোকার আক্রমণ ঠেকাতে জমিতে তিনবার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। তবুও জমি থেকে পোকা সরানো যাচ্ছে না। মান্দা উপজেলায় মাঝে-মধ্যেই নকল কীটনাশক ধরা পড়ে। ভেজাল কীটনাশকের কারখানাও আবিস্কার করে পুলিশ। এসবের কারণে কীটনাশকের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, এবার জমিতে ভিরতাকো প্রয়োগ করে সুফল পাননি। খেত থেকে মাজরা ও পাতা মোড়ানো পোকা সরাতে ১৮ দিনের ব্যবধানে ৩বার স্প্রে দিতে হয়েছে। তাঁর মতো অনেক কৃষককে একইভাবে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে।

কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, পাতা মোড়ানো রোগের জন্য ইনতেফা কোম্পানির তুরাব ও এসিআই কোম্পানির কনজাপ্লাস নামের কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। দ্বিতীয় দফায় একাধিক কীটনাশক প্রয়োগ করেও ভালো ফল পাওয়া যায়নি। অবশেষে ফসল রক্ষায় জমিতে তৃতীয় দফায় স্প্রে দিতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কীটনাশক ভেজাল ও নিম্নমানের না হলে প্রথমবারেই কাজ হত। একাধিকবার প্রয়োগ করায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়সহ ধানগাছ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন জানান, ফুতি পোকা থেকে ধান গাছের পাতা মোড়ানো রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকে। মুলত এর নাম মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা। এর কার্যকরী কোন ট্রিটমেন নেই। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা না করেই কোন কীটনাশককে ভেজাল বা নিম্নমানের বলা যায় না। ভেজাল প্রতিরোধে কীটনাশকের দোকানগুলোতে নজরদারী বাড়ানোসহ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের বৈদ্যপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির বিপুল পরিমাণ ভেজাল কীটনাশক ও সার উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ওই কারখানা থেকে কয়েক ধরণের মেশিন ও উপকরণ জব্দ করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর দক্ষিণ পরানপুর এলাকায় পরিত্যাক্ত একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ ভেজাল কীটনাশক।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ