নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চক গ্রামের বাসিন্দা মিলন হোসেন। পেশায় মুদি দোকানি। এই মুদি দোকানির উদ্ভাবিত ধান বিঘায় ফলন ৪৩ মণ দেখে হতচকিত এলাকাবাসী।এ ধানের বীজ সংগ্রহ করতে মিলনের বাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অনেকে।

বিঘায় ফলন ৪৩ মণ এ জাতের নাম অজানা। আবিস্কার করেছেন এই দোকানি। মেয়ের নাম অনুসারে ধানের নাম দিয়েছেন ‘ফাতেমা ধান’।এরপর কথাটি আর এলাকায় থাকেনি। এ ধানের বীজ গবেষণাগারে পাঠিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

সাধারণ ধানের চেয়ে বেশ লাভজনক হওয়ায় চাষিদের আগ্রহ রয়েছে বেশ। জেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাঈম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, সাধারণত প্রতিটি ধানের শীষে ১৫০-১৬০টি করে দানা থাকে। কিন্তু কৃষক মিলনের উদ্ভাবিত এই ধানের প্রতিটি শীষে ৭০০-৭৫০টি করে দানা হয়েছে। ধানের ফলন বিঘা প্রতি ৪০-৫০ মণও হতে পারে।

কৃষক মিলন হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ব্রি ধান-৫১ জাতের ধান চাষ শুরু করেন তিন বছর আগে। সে সময় তার জমিতে ভিন্ন ধরনের এক গোছা ধানের গাছ দেখা যায়। অন্য গাছের তুলনায় গাছগুলো বেশ শক্ত, লম্বা ও মোটা। তিনি গাছগুলোকে তুলে ফেলে না দিয়ে অন্য ধানের সঙ্গে রেখে দেন। পরে দেখেন ওই গোছার শীষে অনেকগুলো ধান। তখন তিনি সে ধানগুলোকে আলাদা করে কেটে রেখে দেন। পরবর্তীতে সে ধানগুলো আলাদা করে চারা দিয়ে অল্প কিছু জমিতে চাষ করেন। পরের বছর সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে পুনরায় দুই বিঘা জমিতে এ ধানের চাষ করেন।

এ ধানের জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তিনি জানান, অন্য ধানের মতোই এ ধানের চাষ পদ্ধতি। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। গাছের উচ্চতা অন্য ধানের তুলনায় বেশি। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানের শীষে ৭০০-৭৫০টি করে ধান হয়। সাধারণ ধানের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এছাড়া চাল খুব চিকন এবং ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।

মিলন হোসেন জানান, এ বোরো মৌসুমে তিনি এক বিঘা জমিতে ৪৩ মণ ধান পেয়েছেন। যেহেতু এ ধান ইতোপূর্বে কেউ চাষ করেননি। তাই আশপাশের এলাকার চাষিরা এসে বীজ হিসেবে এইধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ৩০০ টাকা কেজি দরে এ ধান বিক্রি করছেন। প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ওপরে তিনি ধান বিক্রি করেছেন।

‘আমরা যেসব ধান চাষ করি তার তুলনায় এ ধানের ফলন তিনগুণ বেশি। আমরা চাই সরকারিভাবে এ ধান কৃষকের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হোক। অনেক ফলন হচ্ছে শুনে তিনি কৃষক মিলনের এ ধান দেখতে এসেছেন। মিলনের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন। আগামীতে তিনি এ ধান চাষ করবেন বলে জানান একই এলাকার কৃষক সাইদুল।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমরা কৃষক মিলনের উদ্ভাবিত এ ধানের নমুনা সংগ্রহ করেছি। মিলন নিজের চেষ্টায় ব্রি ধান-৫১ জাতের মধ্য থেকে কয়েকটা ধানের গোছা সংগ্রহ করে নতুন এ জাত উদ্ভাবন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের আধুনিক ধান চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আগামীতে এ ধানের বিস্তার লাভ করবে বলে আমরা আশাবাদী|

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ