মোট সবজি বীজের ৫৫ শতাংশই কৃষকের নিজস্ব উৎপাদিত

এগ্রিকেয়ার প্রতিবেদক: দেশে সবজি বীজের মোট চাহিদার ৫৫ শতাংশই কৃষকের নিজস্ব উৎপাদিত বীজ। তবে গুণগতমানের দিক দিয়ে এগুলো নিম্ন মানের। মান বাড়ানো জরুরি।

এছাড়া বাকি ৪৫ শতাংশের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩০ শতাংশ ও আমদানি করা হয় ১৫ শতাংশ বীজ। বর্তমানে সবজি বীজের জাতীয় মোট চাহিদা সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন। 

 

রাজধানীতে শুরু হওয়া জাতীয় সবজি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘পরিবর্তিত জলবায়ুতে পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচনে বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি চাষ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মো. হারুনর রশীদ এসব তথ্য তুলে ধরেন।

এসময় তিনি জানান, আমদানি করা বীজের দ্বারা চাষীরা প্রায়শ, প্রতারিত হয় এমন অভিযোগও শোনা যায়। তাই সবজি উৎপাদনের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদনের প্রধানতম উপাদান মানসম্পন্ন বীজের নিশ্চয়তা বিধান কল্পে সরকার ও নীতিনির্ধারকসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের আন্তরিক উদ্যোগ থাকতে হবে।

পরিবর্তিত জলবায়ুতে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী বিভিন্ন সবজির জাত উদ্ভাবন এবং বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে অনেক সময় আকস্মিকভাবে বীজ বা চারার প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে মানসম্মত বীজ বা চারা সরবরাহের মাধ্যমে সংকট উত্তরণ করা সম্ভব।

সবজি চাষ তথা কৃষির কাঙ্খিত উৎপাদন অনেকাংশেই নির্ভর করে অনুকূল আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর। বর্তমানে পরিবর্তিত জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে প্রায়শ, সবজি চাষে কৃষক নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের শর্করা নির্ভর খাদ্যাভাস পরিবর্তন করে খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্যময় পাতাজাতীয় ও ফল মূলজাতীয় সবজিকে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন।

সবজি উৎপাদন পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন একদিকে যেমন আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে ভূমিকা রাখতে পারে অন্যদিকে তা আমাদের দারিদ্র দূরীকরণেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তাই পুষ্টি-স্বাস্থ্য-অর্থ সুরক্ষায় সবজি চাষ অপরিহার্য।

জনপ্রতি সবজি কতটুকু খাওয়া প্রয়োজন কতটুকু খাচ্ছি: বিভিন্ন সূত্র মতে প্রচলিত ও অপ্রচলিত চাষকৃত সবজির সংখ্যা প্রায় ৯০টি। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ টিকে প্রধান সবজি বলে ধরা হয়। দেশের মোট আবাদি জমির ৮.৫ মিলিয়ন হেক্টরের মধ্যে সবজি চাষে ব্যবহার হচ্ছে মাত্র শতকরা ৯.৩৮ ভাগ জমি।

আর পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী মাত্র ০.৪০ মিলিয়ন হেক্টর জমি থেকে ৩.৭৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন (আলু ব্যতিরেকে) সবজি উৎপাদিত হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন প্রতিজনের জন্য প্রায় ৬২ গ্রাম সবজি উৎপাদিত হয়েছে।

কিন্তু এই পরিমাণ কখনোই মাথাপিছু প্রাপ্যতা হিসাবে ধরা যাবে না কারণ বিভিন্ন মাধ্যমের হিসাব মতে গড়ে যদি চার ভাগের এক ভাগও সংগ্রোহত্তর পর্যায়ে নষ্ট হয়ে যায় তা’হলেও তা ৫০ গ্রামে নেমে আসে।

সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু সেটা ঋঅঙ কর্ত্ক অনুমোদিত মাথাপিছু প্রতিদিন ২২০ গ্রাম এর তিন ভাগের এক ভাগের বেশি নয়। বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় হলেও সবজি উৎপাদন বর্তমানের তুলনায় তিনগুণ বা তারও বেশী বৃদ্ধি করতে হবে।

সবজির বিশাল ঘাটতি পূরণে যা করতে হবে: সবজির চাষ বাড়াতে হবে। বছরব্যাপী কি কি ধরনের সবজি, কখন লাগানো যায় তা জানা, চাষের নিয়ম কানুন, প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রাপ্তি এবং সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে।

কৃষক সাশ্রয়ী মূল্যে সবজি বীজ ও সবজি চাষের জন্য আনুসঙ্গিক পরামর্শ ও উপকরণ পেলে আর বছরব্যাপী সবজি চাষে চাষীকে উৎসাহিত করা হলে কর্মসংস্থান ও বাড়তি আয়ের সুযোগও মিলবে।

সবজির মত দ্রুত পচনশীল অথচ অতীব প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের উন্নত বিপণন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতীয় পর্যায়ে সরকার ও নীতি নির্ধারকদের আশু দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। স্থানীয়ভাবে কৃষকদের যথাযথ মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানে সবজি ফসলের রপ্তানী বাজার স¤প্রসারণের লক্ষ্যেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভরা মৌসুমে যথাযথ মূল্য প্রাপ্তির সমস্যা হলে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে তা সংরক্ষণে উৎসাহিত করতে হবে। এক্ষেত্রেও উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত পণ্য নিজস্ব খাবার হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও বিপণনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এ পদক্ষেপের কার্যকর বাস্তবায়নের স্বার্থে।

সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবজি চাষে রাসায়নিক সারসহ সবজিকে পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নানা রকম বালাইনাশকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এখন যুক্ত হয়েছে সবজি চাষে নানা রকম হরমোন প্রয়োগের কর্মকান্ড। সঠিক মাত্রা না মেনে এবং সঠিক বালাইনাশক না ব্যবহার করার কারণে সবজি অনিরাপদ হয়ে পড়ছে।

সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আইপিএম বা জৈব কৃষিকে উৎসাহিত করে এবং প্রয়োজনে সঠিক মাত্রায় সঠিক বালাইনাশক সঠিক সময়ে প্রয়োগ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে।

সবজি চাষে পুষ্টি-স্বাস্থ্য-অর্থ সুরক্ষায় মানসম্মত বীজ নিশ্চিতকরা অতি জরুরী। উন্নত জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সরকারী পদক্ষেপের পাশাপাশি আমাদের যৌথ প্রয়াস কার্যকর ভূমিকা রাখবে। দেশে সবজির মানসম্মত বীজ উৎপাদন ও বিতরণ প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়।

আজ এ মেলার দ্বিতীয় দিন। তিনদিনব্যাপী ‘সারা বছর সবজি চাষে, পুষ্টি-স্বাস্থ্য-অর্থ আসে’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চত্বরে এ মেলা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জানুয়ারি, ১৫, ২০১৮