চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি: গত বছরের মতো এবারও করোনা পরিস্থিতিতে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে, ম্যাংঙ্গো ট্রেনে আগ্রহ নেই বড় ব্যবসায়ীদের।

চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আম নিয়ে প্রতিদিন ছেড়ে যাচ্ছে এ ট্রেন। সড়কপথের যানবাহনের তুলনায় কম খরচে আম ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে স্পেশাল এ ট্রেনে। তবে তা সত্ত্বেও আম পরিবহনে ম্যাংঙ্গো স্পেশাল ট্রেন ব্যবহারে কৃষক ও বড় ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মূলত প্রচার প্রচারণার অভাব ও ঝক্কি-ঝামেলার কারণে কৃষক ও বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না এ ট্রেন সার্ভিস।

রাজশাহী আমের জন্য বিখ্যাত হলেও মূলত চারঘাট-বাঘার আম নিয়েই রাজশাহী আমের জন্য বিখ্যাত। সমগ্র রাজশাহী জেলায় এবার আম উৎপাদন হয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চারঘাট-বাঘা দুই উপজেলা মিলে ১২ হাজার ২১৮ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হয়েছে। যা পুরো রাজশাহী জেলার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ।

সরেজমিন চারঘাট-বাঘা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিনই হাজার হাজার ক্যারেট আম ট্রাক লোড হয়ে সড়কপথে ঢাকায় যাচ্ছে। আড়তগুলোর সামনে ছোট বড় ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। অথচ সড়কপথের যানবাহনের তুলনায় কম খরচেও কৃষক ও বড় ব্যবসায়ীদের ম্যাংঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আগ্রহ নেই।

চারঘাটের সরদহ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মে ম্যাংঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে চারঘাটের আমের প্রথম চালান ঢাকায় যায়। এরপর গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) পর্যন্ত ১৫ দিনে সরদহ স্টেশন থেকে আমের বুকিং হয়েছে প্রায় ৬৫ টন। প্রথম দিকের চেয়ে আম বুকিংয়ের পরিমান সামান্য পরিমান বাড়লেও কৃষক ও বড় ব্যবসায়ীদের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অনলাইন আম ব্যবসায়ী ও আত্নীয় স্বজনের কাছে আম পাঠাতেই ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম বুকিং করছেন লোকজন।

চারঘাটের আমবাগান মালিক রেজাউল ইসলাম বলেন, আমার বাগান উপজেলার পরানপুর এলাকায়। এখান থেকে রেলস্টেশন প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এতটা পথ ট্রাকে করে আম নিয়ে যেতে হবে। আবার ট্রেনে আম তোলার জন্য ক্যারেট প্রতি ১০ টাকা কুলি খরচ। সেই আম কমলাপুর নামার পর আবার কুলির খরচ। সেখানে থেকে ট্রাকে করে আড়তে নিতে আবারও খরচ। রাতের মধ্যেই সব আম আনলোড করতে না পারলে দিনে ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হয় না সেখানে। এসব দিক বিবেচনা করলে ট্রেনের চেয়ে ট্রাকে আম পরিবহন করা অনেক সহজ। এজন্যই আমি ট্রেনে আমার আগ্রহ নেই।

চারঘাট সদরের আম ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, ট্রেনে কেজি প্রতি আম পরিবহনে খরচ হয় ১ টাকা ১৮ পয়সা। চারঘাট থেকে ট্রাকে এক ক্যারেট আম ঢাকায় পাঠাতে আমাদের খরচ হয় ৫০-৫৫ টাকা।কেজিপ্রতি পড়ে ২ টাকার মত। রেলে আম পাঠালে খরচ সামান্য কম হলেও ঝক্কি-ঝামেলা অনেক বেশি। এছাড়াও স্টেশন নিয়ে যাওয়া, কমলাপুর থেকে আবার আড়তে নিয়ে যাওয়া, সাথে দুই জায়গার কুলি খরচ। সব মিলিয়ে ট্রেনে আম পাঠাতে খরচও বেশি, সাথে ঝামেলাও অনেক।

এদিকে চারঘাটের ‘রাজশাহীর আম’ নামের অনলাইন আম ব্যবসায়ী শামীম রেজা বলেন, গত মৌসুমের মত এবারও অনলাইনে আমের ব্যবসা করছি। করোনা কালে অনলাইনে ভাল সাড়া পাচ্ছি। কুরিয়ার ভেদে ঢাকায় আম পাঠাতে কেজি প্রতি আমাদের খরচ হয় ১০-১৫ টাকা। কিন্তু ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে খরচ হয় ১ টাকা ১৮ পয়সা। কুলি খরচ ও বাড়তি কিছু পরিশ্রম করা লাগলেও কুরিয়ারের চেয়ে ট্রেনে লাভ বেশি। আমের ট্রেন ঢাকার সব স্টেশনে থামে। এটা বাড়তি একটা সুবিধা। সব মিলিয়ে ম্যাংঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আমার মত অনলাইন আম ব্যবসায়ীরা খুশি।

ম্যাংঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের বিষয়ে সরদহ স্টেশন মাস্টার ইকবাল কবির বলেন, আমাদের স্টেশনে প্রতিদিনই আমের বুকিং চলছে। কেজি প্রতি ১ টাকা ১৮ পয়সা। স্টেশন থেকে দুরুত্বের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আম কম দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যারা অনলাইন আম ব্যবসা করেন ও আত্নীয় স্বজনের কাছে আম পাঠান তারা অনেক আম বুকিং করছেন। কারণ এ ট্রেন ঢাকার প্রতিটি স্টেশনে থামে এবং কুরিয়ারের চেয়ে খরচও কম। তবে আস্তে আস্তে বড় ব্যবসায়ীদের কাছেও ম্যাংঙ্গো স্পেশাল ট্রেন জনপ্রিয়তা পাবে বলে জানান তিনি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ