যে কারনে আম গাছে

ফয়সাল মাহমুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: অতীতে এমন সময়ে অধিকাংশ আম গাছ মুকুলে ছেয়ে থাকতো আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাগঞ্জ এলাকায়। কিন্তু এবার ঠিক একই সময়ে মুকুলের খুব বেশি দেখা মিলছে না। যে কারণে আম গাছে দেরিতে মুকুল আসছে তার কারণ হিসেবে জলবায়ুর প্রভাবকে দায়ি করছেন গবেষকরা।

তারা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবেই মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমগাছে মুকুল দেরিতে আসছে। তবে দেরিতে মুকুল আসায় কৃষিকর্মকর্তারা ভালোভাবেই দেখছেন। তারা মনে করছেন, দেরিতে মুকুল মানে আমও দেরিতে পাঁকবে এতে চাষিরা ভালো দাম পাবেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফাল্গুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও আমের মুকুলের আশানুরুপ দেখা পাওয়া যায় নি। জেলার কিছু কিছু গাছে মুকুল আসলেও পরিমাণে তা খুবই অল্প।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, গত এক দশক আগেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মধ্য জানুয়ারি অর্থাৎ মাঘের শুরুতেই গাছে গাছে মুকুল দেখা দিতো। মধ্য মাঘেই মুকুলে মুকুলে ছেয়ে যেতো গাছ। কিন্তু এবার ফাল্গুন শুরু হলেও আশানুরুপ মুকুলের দেখা নেই।

চাষিরা এ প্রতিবেদককে জানান, বাগানের দুই একটি গাছে এসেছে মুকুল। বাগানে বাগানে এখন মুকুল পূর্ববর্তী পরিচর্যা করছেন তারা। গত কয়েক বছর ধরেই মুকুল কিছুটা দেরিতে আসলেও এতোটা দেরি হয় নি।

শহরের সরকারপাড়ার বাগানের মালিক আব্দুল আলীম আম গাছের  পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি জানান, এখন মুকুল কেবল দেখা দিয়েছে। আসলে এ বছর আবহাওয়ার কারণে এবার মুকুল নামলা (দেরীতে)।

বিষয়টি নিয়ে অনেক আম চাষীদের মাঝে অনেকটা উৎকণ্ঠাও কাজ করছে। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে গাছে মুকুল নাও আসতে পারে এই আশঙ্কা করছেন তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (আম গবেষণা কেন্দ্র) মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের যা পর্যবেক্ষণ তাতে দেখা যাচ্ছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মুকুল আসতে কিছুটা বিলম্বিত।

যে কারণে আম গাছে দেরিতে মুকুল আসছে এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তাপমাত্রা কম থাকায় আম গাছ মুকুলিত হতে পারছে না। আগে মধ্য জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি প্রথম দিকে মুকুল আসতো। কিন্তু এবার এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে। জলবায়ুর পরিবর্তনটাই প্রধান কারণ বলে আমরা মনে করছি। এই বছর বিলম্বিত হচ্ছে। মাঘের শেষদিন পর্যন্তও বেশ শীত অনুভূত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে।

এখনো গাছ মুকুলিত হওয়ার সময় আছে বলে জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা। তিনি বলেন, তাপমাত্রাটা একটু বাড়লেই গাছ মুকুলিত হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত ২০ শতাংশ গাছ মুকুলিত হয়েছে।

দেরিতে মুকুল আসায় আমের উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে এ কর্মকর্তা বলেন, প্রাকৃতিকভাবে মুকুল একটু দেরিতে আসাকে ভালো মনে করি। কারণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সর্ব পশ্চিমের জেলা। পূর্বদিকের জেলাগুলোকে মুকুল আগেই আসে। তাই তাদের আম আগেই শেষ হয়ে যায়।

দেরিতে মুকুল আসা চাষীদের জন্য আশির্বাদও হতে পারে উল্লেখ করে ‍তিনি জানান, মুকুল দেরিতে আসা বা আম দেরিতে পাকা সবই আমাদের চাষীদের পক্ষে যায়।

গত বছরও দেখা গেছে, আগাম পেকে যাওয়া অন্য এলাকার যেখানে দুই হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়নি, সেখানে ওই একই জাতের আম একটু দেরিতে পাকায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, যোগ করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন: আমের ফুল ও ফল ঝরে পড়া রোধের কৌশল এবং পরিচর্যা