এগ্রিকেয়ার২৪.কম পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বার্তা ডেস্ক: দুধ প্রসঙ্গ আসলেই খাঁটি শব্দটি চলে আসে। পুষ্টিসমৃদ্ধ এই খাবার খাঁটি খেতে না পারলে শুধু কিনেই খাওয়া হবে তা আর গুণে লাগবে না। পরিপূর্ণ পুষ্টি সমৃদ্ধ দুধ পেতে বা খেতে চাইলে ভোক্তাদের যেতে হবে খামারে। কেননা যে কোনো প্রক্রিয়াজাত দুধের চেয়ে খামারের খাঁটি দুধে পুষ্টিগুন সবচেয়ে বেশি।

পাঠক আজ এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছেন খামার মালিক ও সুপেরিয়া এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চেয়ারম্যান খালিদ এইচ সরকার রবিন।

খামারের খাঁটি দুধ সংগ্রহ করে তা মিল্ক প্রসেসিং কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে তরল ও শুষ্ক দুই ধরনের দুধ তৈরী করা হয়। এক নম্বর হলো প্রক্রিয়াজাত তরল দুধ হল ও দুইয়ে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত শুষ্ক দুধ।

প্রক্রিয়াজাত তরল দুধ হল- ১. পাস্তুরিত ফুল ক্রিম দুধ ২. পাস্তুরিত লো-ফ্যাট/ নন-ফ্যাট দুধ ৩. পাস্তুরিত ভেজিটেবল ফ্যাটযুক্ত দুধ ৪. নানান রকম ফ্লেভারড দুধ ৫. ভেজিটেবল ফ্যাট ও চিনিযুক্ত সুইটেন্ড কনডেন্সড মিল্ক। প্রক্রিয়াজাত শুষ্ক দুধ হল-১. ফুলক্রীম গুড়োদুধ ২. লো-ফ্যাট/ নন-ফ্যাট গুড়োদুধ ৩. ভেজিটেবল ফ্যাটযুক্ত গুড়োদুধ ৪. হোয়ে পাউডার (ছানার পানির পাউডার)।

এত রকম দুধ তৈরীর মূল কারণ হল- খামারের খাঁটি দুধের সেলফ লাইফ কম, অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যায়। প্রক্রিয়াজাত করলে সেলফ লাইফ বাড়ে, অনেক দিন রাখা যায়। শুধুমাত্র এই একটি কারনেই দুধ প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

কিন্তু জানেন কি? খামারের খাঁটি দুধের পুষ্টিগুন অন্য যেকোন প্রক্রিয়াজাত দুধের চেয়ে বেশী। কারন প্রক্রিয়াজাত করার সময় ভিটামিন, মিনারেলস, প্রোটিনসহ অনেক পুষ্টিগুনই নষ্ট হয়ে কমে যায়। তাই পাশের দোকানে বা সুপারসপের সেলফে সহজে দুধ পেতে হলে আপনাকে এই ক্ষতিটুকু মেনে নিতেই হবে।

কিন্তু আপনি যদি একটু কষ্ট করে গরুর কাছে চলে যান- অর্থাৎ খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করেন- তবে প্রক্রিয়াজাতকরণ লাগছে না। আপনি পেয়ে যাচ্ছেন সরাসরি খামারের গরুর সর্বোচ্চ পুষ্টির খাঁটি দুধ।

আরও একটি ব্যাপার আছে। সারা পৃথিবীতে ফ্রিজিয়ান গরুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী হওয়ায় এই গরুর দুধের ফ্যাটকেই স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। আর তা হল ৩.৫%। তাই ৩.৫% ফ্যাট দুধে থাকলেই তাকে ফুলক্রীম দুধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

কিন্তু জানেন কি? আমাদের দেশে পিউর ফ্রিজিয়ান পালা হয় না। দেশে যেসব সাদাকালো গরু দেখা যায় এগুলো ফ্রিজিয়ানের সাথে দেশী বা শাহীওয়াল, সিন্ধি, জার্সি প্রভৃতির ক্রস। দেশী, শাহীওয়াল, সিন্ধি, জার্সি প্রভৃতি গরুতে ফ্যাট ৪.৫ – ৫ – ৬% পর্যন্ত হতে পারে।

তাই ফ্রিজিয়ান ক্রসেও ফ্যাট ৪% এর উপরেই থাকে। তাই খামার থেকে দুধ কিনলে আপনি পুরো ফ্যাটটাই পাচ্ছেন। প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় ৩.৫% ফ্যাট রেখে বাকীটা তুলে নেয় যদিও সংজ্ঞা অনুযায়ী দুধটি ফুলক্রীমই থাকে।

তাই বুঝতে পারছেন তো? খামারের দুধই সেরা দুধ- কোন সন্দেহ নাই। “চল চল খামারে যাই– খাঁটি দুধের বিকল্প নাই।”

সপ্তাহান্তে বা ১৫ দিন পর পর বা না পারলে মাসে একবার হলেও খামারে চলে যান- ৭ দিন/ ১৫ দিন/ ৩০ দিনের দুধ একবারে নিয়ে আসুন। ফ্রিজে রেখে ধীরে ধীরে খান। খামারের ফ্রেশ দুধ বোতল বা গ্যালনে ভরে ৭-৮ ঘণ্টার মধ্যে বাসায় এসে ফ্রিজে ঢুকালে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।