বাসস: ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলায় বাণিজ্যিভাবে শুরু হয়েছে রঙিন (বেগুনি বা রাণী গোলাপি ও হলুদ রঙের) ফুলকপি ও ব্রকলির আবাদ। এ ফুলকপি দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে।

উপজেলার কৃষকেরা সাধারণত সাদা ফুলকপির আবাদ করে থাকেন। পৌর এলাকার জগতপুর গ্রামের অর্গানিক ভেজিটেবল গার্ডেন এর স্বত্বাধিকারী তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ হাসান আহমেদ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৬০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন ফুলকপি, ব্রকলি ও বিভিন্ন ধরনের চাইনিজ ভেজিটেবল চাষ করছেন। উপজেলায় রঙিন ফুলকপি চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এ তরুণ উদ্যোক্তা।

অর্গানিক ভেজিটেবল গার্ডেনে গিয়ে দেখা গেছে, বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাসান। রঙিন ফুলকপি, ব্রকলি, বিটরুট, চাইনিজ ক্যাবেজ, চেরি টমেটো, শালগম, ধান, সরিষাসহ ফুলকপি ও বাঁধাকপির ব্যাপক আবাদ করছেন। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ হাসানের অর্গানিক ভেজিটেবল গার্ডেনে রঙিন ফুলকপি দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ রঙিন ফুলকপি হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন। অনেকে বাগান থেকেই কপি কিনে নিচ্ছেন।

রঙিন ফুলকপি দেখতে আসা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমারও ইচ্ছা আছে রঙিন ফুলকপি চাষ করার। এ জন্য সামনাসামনি দেখতে এসেছি। ফুলকপিগুলো দেখতে খুব ভালো লাগছে। এর চাহিদাও দ্বিগুণ। খেতেও অনেক সুস্বাদু। স্থানীয় এক কৃষক জানান, এ প্রথম হাসান আহমেদের জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ দেখেছি। দেখতে খুব সুন্দর। বাজারে দামও বেশ ভালো। আগামীতে আমি এ রঙিন ফুলকপি চাষ করবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা হাসান বলেন, আমি ৬০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপি, ব্রকলি, বিটরুট, চাইনিজ ক্যাবেজ, চেরি টমেটো, শালগম, ধান, সরিষাসহ ফুলকপি ও বাঁধাকপির আবাদ করছি। গেল বছর রঙিন ফুলকপির পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেছিলাম। এ বছর ব্যাপকভাবে করার চেষ্টা করেছি এবং সফলও হয়েছি। ফলনও হয়েছে ভালো। মূল্যও ভালো পাচ্ছি। তবে রঙিন হওয়ায় বাজারে এ ফুলকপির দাম দ্বিগুণ। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কেজি রঙিন ফুলকপি বিক্রি করেছি। প্রায় ৮৫ হাজার টাকার কপি বিক্রি করা হয়েছে।

প্রথম প্রথম একটু বেশি দামে বিক্রি করলেও এখন প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। অনলাইনে অর্ডার পাচ্ছি। অর্গানিক ভেজিটেবল নামে ফেসবুক পেইজ আছে। সেখানে রঙিন ফুলকপির ছবি আপলোড করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এ কপি চাষে কোনো প্রকার বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়নি, শুধু জৈব স্যার ব্যবহার করছেন বলে জানান তিনি। একই পরিমাণ খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ কপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, উদ্যোক্তা হাসানকে সরেজমিনে গিয়ে সকল ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই সব কৃষকের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তির নতুনত্ব পৌঁছে দিতে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আশা করছি তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও এ রঙিন ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহী হবে। কৃষি অফিস বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করে যাবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ হাসান আহমেদ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে থাকেন। বাণিজ্যিকভাবে তিনি রঙিন ফুলকপি, ব্রকলি এবং চাইনিজ ভেজিটেবল চাষ করেছেন। এ ফসলগুলো দেখতে রঙিন হওয়ায় শহরের ভোক্তাগণ বেশি ক্রয় করে থাকেন।

এজন্য শুরু থেকেই আমরা চেষ্টা করেছি কিভাবে কম বালাইনাশক ব্যবহার করে নিরাপদ ভাবে উৎপাদন করা যায় সেদিকটা খেয়াল রাখা এবং সেটা আমরা সফল হয়েছি। ভবিষ্যতেও যে সকল তরুন কৃষকেরা ফসল আবাদ করতে আগ্রহী তাদেরকেও কিভাবে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা যায় তার প্রযুক্তি দিয়ে আমরা সহায়তা করে যাবো।

অর্গানিক ভেজিটেবল পরিদর্শন করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ একরাম উদ্দিন, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ নয়ন মনি সূত্রধর।