আব্দুল হাকিম, জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী: পণ্য বেচাকেনার সহজ মাধ্যম হিসেবে বর্তমানে জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেট প্লেস। ক্রেতারা মোবাইল ফোনে ক্লিক করে হাতের নাগালে পাচ্ছেন যে কোনো পণ্য। বেচাকেনায় পিছিয়ে নেই রাজশাহীর আম। গত কয়েক বছরের মতো চলতি বছরও অনলাইন বাজারে আম বিক্রেতাদের বেশ আনাগোনা লক্ষ করা গেছে। এই মাধ্যমে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে বেশ ভালো।

করোনাকালে মানুষ মোটামুটি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে অনলাইন কেনাকাটায়। ঘরেই বসেই আম প্রেমীরা পাচ্ছেন গোপলভোগ, রানী পছন্দ, ল্যাংড়া, লখনা, হিম সাগর, ক্ষীরসাপাত, আম্রপালিও ফজলিসহ নানা জাতের আমের স্বাদ।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় অর্ডার করার দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে দেশের গ্রাহকরা পাচ্ছেন এসব আম। জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরী এবং জেলার কয়েকটি উপজেলায় অনলাইনে আম বেচাকেনা হচ্ছে। তবে এর মধ্যে পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকাতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ এখানে দেশের বৃহৎ আমের হাট বসে। এখান থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা আম কিনে পাঠান দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। এ অঞ্চলের আম বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে আম।

এদিকে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন,অর্ডার করার দুই তিনদিনের মধ্যেই ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে রাজশাহীর সুস্বাদু আম। অর্ডার করা থেকে শুরু করে টাকা আদান-প্রদান সবকিছুই অনলাইনে। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তার হাতে পৌঁছে দিচ্ছে বাগানের ফরমালিনমুক্ত সতেজ আম।

বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, গ্রুপে আমের বাহারি ছবি পোস্ট করে প্রচার চালিয়ে ক্রেতার নজর কাড়তে চাচ্ছেন অনলাইন উদ্যোক্তারা। অনেকে অ্যাপ বানিয়েও আম বিক্রি শুরু করেছেন। অপরদিকে ছবি দেখে ফোনের মাধ্যমে বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে আমের অর্ডার করছেন ক্রেতারা। সে অনুযায়ী কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যায় বিভিন্ন জাতের আম।

অনলাইনে প্রথমবার আম ব্যবসায় এসেছেন সজিব হোসেন। তিনি জানান , করোনা মহামারিতে ঘরে বেকার বসে না থেকে মনে হলো এখন তো আমের সময় অনলাইনে তো আম বিক্রি করা যায়। তাই আম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেই। এবার আমার প্রথম বেশ ভালোই সাড়া পড়েছে। এ কয়দিনে ১০ মণ আম কুরিয়ার করে দেয়া হয়েছে। এগুলো সব গোপালভোগ। ক’দিন পর আর ক্ষিরশ্যা বা হিমসাগর আম আসবে সেখান থেকে আরো ভালো লাব হবে বলে মনে করি।

অনলাইনে প্রথমবার আম ব্যবসায় আরেক ব্যক্তি হলেন আল-আমিন হোসেন। পড়াশোনা করছেন রাজশাহী কলেজে। অনার্স তৃতীয় বর্ষে। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্কুল কলেজ সব বন্ধ। বাড়িতে অযথা সময় নষ্ট না করে কাজে লাগানোর জন্য এই কাজ শুরু করেন। বর্তমানে সময়টিকে বা যুগকে ব্যবসায়ের জন্য অনুকূল হিসেবেই গণ্য করা হয়।

তিনি আরো বলেন, ব্যবসা আরম্ভ করা খুব বেশী কঠিন না। তবে ব্যবসায়ের এই সহজলভ্যতার বাজারে প্রতিযোগীতামূলক ব্যবসা করা খুবই কঠিন। সকল ব্যবসায়ীরাই চান তার ব্যবসা সম্পর্কে সকল ক্রেতা বা ভোক্তারা জানুক। পন্য অন্য কারো থেকে না নিয়ে তাদের থেকেই ক্রয় করুক।

আল-আমিন জানান, সারাক্ষণ নিউজফিডে ঘুরে সময় নষ্ট না করে নিজের সময়টাকে কাজে লাগানো যায়। ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় আর ডাটা নষ্ট করা হচ্ছে সেগুলোই কাজে লাগিয়েই যদি ফেসবুক থেকে আয় করলে কিন্তু ব্যাপারটা মন্দ হয় না। যদি ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা করা যায়, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা বেশ মজার হবে। সেইসাথে পড়াশোনার খরচ বা নিজের হাতখরচও উঠে আসে।

অনলাইনে আম ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান আকাশ বলেন, আমাদের নিজস্ব আম বাগান রয়েছে। এছাড়াও বাজার থেকে আম নিয়ে অনলাইনে দিয়ে থাকি। আমরা ফরমালিনমুক্ত আম সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। অনলাইনে আমের অর্ডার থেকে শুরু করে টাকা-পয়সার লেনদেন সবকিছুই হয়। এখন পর্যন্ত বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি আশা করি আরো ভালো সাড়া পাবো ।

রাজশাহীর ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে আম বিক্রি করছে। তবে এর কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ধরনের নাম ব্যবহার করে ফেসবুকে পেজ খুলে সেখানে আমের ছবি পোস্ট করে প্রচার চালিয়ে ক্রেতার নজর কাড়েন ব্যবসায়ীরা। ছবি দেখে ফেসবুকের মাসেঞ্জারে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে আমের অর্ডার করেন ক্রেতারা।

সে অনুযায়ী আমের প্যাকেটজাত করা হলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যায় রাজশাহীর বাহারি জাতের আম। রাজশাহীতে অনলাইন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে- রাজশাহী ম্যাংগো ডটকম, ফজলি ডটকম, খাঁটি রাজশাহীর আম, আম রাজশাহী, আমের বাজার, রাজশাহী আমের হাট, রাজশাহীর আম বাজার, অনিমা আম বাজার।

রাজশাহী আম ব্যাসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে এখন মানুষ আম বেচাকেনা বেশি করছে। কারণ এখন করোনাকাল। সচেতন মানুষ বাইরে বের কম হয়। অনলাইনে তারা অর্ডার দিয়ে থাকে। এছাড়া যুগ আধুনিক হচ্ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বেশ ভালো সাড়া ফেলেছে অনলাইন প্লাটফর্মগুলো । মনে হয় সামনে আর দুই তিন বছর পর সবাই অনলাইনে কেনাকাটা করবে আর বাজারে যাবেনা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, অনলাইনে আমের বিক্রি বেড়েছে, এটি ইতিবাচক হিসেবে বলা যায়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় থাকছে এতে। মানুষ অনলাইন প্লাটফর্মের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। আমরা থেকে উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট দিচ্ছি। ক্রেতারা যেন ভালোটা পায় সেজন্য পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের ওপরও জোরারোপ করা হচ্ছে। অনলাইনে অনেক জিনিস কেনাকাটা হয়। সেখানে কিন্তু ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ; আম এমন একটা জিনিস যেখানে সময়মত কিনলে ভালো আম পাবে ভোক্তারা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ