নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সরকারের দেওয়া দফায় দফায় লকডাউনে সারাদেশের মত লোকসানে পড়েছেন রাজশাহীর খামারিরা। সারা বছরের কষ্টের বিপরীতে মেলেনি কাঙ্খিত মুনাফা। রাজশাহী জেলায় এবার কোরবানির উদ্দেশ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি পশু পালন করেন খামারি ও কৃষকরা। কোরবানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৮৯টি পশু। ফলে এখনও অবিক্রিত থেকে গেছে ৭৩ হাজার ১২৯টি পশু।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঈদ উপলক্ষে রাজশাহীর ৯টি উপজেলা ও একটি মেট্রো (বেয়ালিয়া) অঞ্চল মিলিয়ে মোট ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর মধ্যে গাভী ৯ হাজার ১৬০টি, ষাঁড় ৫৩ হাজার ৬৯৪টি ও ৩১৫টি মহিষ কোরবানি হয়েছে। এছাড়াও ছাগল ২ লাখ ২৬ হাজার ১২৭টি এবং ভেড়া কোরবানি হয়েছে ১৯ হাজার ৬৬৩টি। কোরবানি পরবর্তী সময়ে গরু ও মহিষ ৪০ হাজার ৮৪০টি এবং ছাগল ও ভেড়া ৩২ হাজার ২৮৯টি অবিক্রিত রয়েছে।

কোরবানির উদ্দেশ্যে প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ছাগল প্রস্তুত ছিল, যা বেশিরভাগই বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অবিক্রিত রয়ে গেছে মহিষ। রাজশাহীতে মহিষ কোরবানির সংখ্যাটা খুবই কম। ফলে এবারের লকডাউনে প্রস্ততকৃত ২ হাজার ৯৫৬টি মহিষের মধ্যে মাত্র ৩১৫টি মহিষ কোরবানি হয়েছে। বাইরে বিক্রির সুযোগ না থাকায় প্রায় সবগুলোই অবিক্রিত রয়েছে। আর ৩৫ হাজার ভেড়ার মধ্যে কোরবানি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৬৬৩টি। অবশিষ্টগুলো অবিক্রিত রয়ে গেছে।

কথা হয় রাজশাহী পুঠিয়ার কান্দ্রা গ্রামের আলিমুদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, সাদা-কালো ফিজিয়ান জাতের ৩০ মণ ওজনের ষাঁড় ছি তার। প্রত্যাশা ছিল ১৬ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন। কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি তিনি।

দুর্গাপুর উপজেলার আহান অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম জানান, ৩০টি গরু ঢাকায় বিক্রির উদ্দেশ্যে পাঠালেও বিক্রি হয়নি। ১৯টি বিক্রি হলেও অবিক্রিত রয়েছে ১১টি গরু। অবিক্রিত গরুর দাম নির্ধারণ করলে প্রায় ৩ লাখ টাকার ওপরে পড়বে। এবারের ঈদে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা থাকলেও বড় গরুর চাহিদা একেবারেই দেখা যায় নি।

নগরীর খড়খড়ি এলাকার ওয়াফি অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন জানান, ৫৩টি গরু পালন করেছিলেন তিনি। বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র ১৫টি। আগামী ঈদের জন্য রেখে দেবেন বলেও জানান এই খামারি।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইসমাইল হক বলেন, করোনার কারণে মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে। আর্থিক সংকটের কারণে বেশিরভাগই কোরবানি হয়েছে ছাগল। বড় গরুর দিকে মুখ তুলেও তাকায়নি অনেকেই। লকডাউনে বাইরের ক্রেতা আসতে না পারায় বড় গরুগুলো নিয়ে খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। ভারত থেকে যেহেতু গরু আমদানি হয়নি, তাই দেশের গরু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি খামারিরা ন্যায্য দাম পেয়েছেন। এছাড়া করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে সরকার। যাতে তারা সামনে এগুতে পারে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ