হাসনাত হাকিম, রাজশাহী: রাজশাহী অঞ্চলে এ বছর আমের ভালো ফলন হলেও চাষিদের মুখে দেখা যাচ্ছে না হাসির ঝলক। গতবছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে প্রতিমণ আমে নাই হয়ে গেছে হাজার টাকা।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ক্রেতার অভাবে আমের বাজারজাতকরণ ও বিপণন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেক কৃষক আমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা করোনা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে আসছেন না বলে বলছেন আম চাষিরা।

আম ব্যবসায়ী আফছার আলী বলেন, ‘ল্যাংড়া আম ১৭’শ থেকে ১৮’শ টাকা দরে যা গতবছর ২২’শ থেকে ২৫ ’শ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গোপাল ভোগ ১৬’শ থেকে ১৮ ’শ টাকা দরে । যা গত বছর বিক্রি হয়েছে ২৬ থেকে ২৮’শ টাকা। এখানে আমাদের ৮’শ থেকে হাজার টাকা কম পাচ্ছি। ক্ষিরসাপাত ১৬ ’শ থেকে ১৮ বিক্রি হচ্ছে। গতবছর বিক্রি হয়েছে ২২’শ থেকে ২৪’শ টাকা দরে। এছাড়াও লখনা ৬’শ থেকে ৮’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গতবছর বিক্রি হয়েছে ১৪’শ থেকে ১৬ ’শ টাকা দরে।’

গতকাল শনিবার আম বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  এবারও বাজারে রয়েছে বাড়তি ঝামেলা। ৪০ কেজিতে মণ থাকার কথা থাকলেও দিতে হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫২ কেজি। যা মণপ্রতি বেশি দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ কেজি করে। এতে লোকসানে পড়ছেন কৃষকরা।

আম ব্যবসায়ী বাদশা মন্ডল বলেন, ‘এমনিতে আমের বেচাকেনা নাই। এরপরও বাড়তি ঝামেলা হিসেবে যুক্ত হয়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ কেজি বেশি দিতে হচ্ছে। তাছাড়া কেউ আম নিতে চাইনা । তাই বাধ্য হয়েই দিতে হচ্ছে এইভাবে।’

ক্রেতারা কেমন আমের দাম বলছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু ক্রেতা আমার আমের একটা দাম বলেছে, তবে আমি আরও কিছুটা ভাল দামের জন্য অপেক্ষা করছি। কেবল স্থানীয় ক্রেতাকেই বাজারে দেখা যাচ্ছে। জেলার বাইরের লোকজন খুব কম আসছে।’

এবিষয়ে রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, এবার রাস্তা থেকে কলেজে স্থানান্তর করে নিয়ে এসেছি। যার কারণ হলো বানেশ^র এই হাটের পাশেই রয়েছে জাতীয় মহাসড়ক। আমেরহাট বসলে সেখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। একটা গাড়ী পার হতে সেখান থেকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। এই যানজট ও আমহাটটি ছোট হওয়ায় আমের বাজার স্থানান্তর করতে হয়েছে।

আমহাটটি ছোট হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যাচ্ছিলো না। এখন এখানে অনেক বড় যায়গা থাকায় স্বাস্থ্যবিধির কোনো লংঘন হচ্ছেনা। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের যাতে অসুবিধা না হয় তাই মাঠে বালু ফেলা , ছাঁয়ার জন্য ত্রিপল প্যান্ডেলের সুব্যবাস্থা করে দিয়েছি।

ঢলনপ্রথা সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে এক ধরণের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা যদি বলে আমরা এতো কেজি নাহলে নিবোনা। তখন বাধ্য হয়ে আম বাগান মালিকদের বেশি দিতে হচ্ছে। তাছাড়া তাদের আম নষ্ট হয়ে যাবে এবং ব্যপক লকশানের মধ্যে পড়বে। এই ধরণের ঘটনা যদি আমাদের নজরে আসে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল বলেন, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বেড়েছে ৩৭৩ হেক্টর জমি। আম উৎপাদন হবে সম্ভাব্য ২ লাখ ১৯ মেট্রিকটন। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন। এবার প্রায় হাজার কোটির টাকার আম বিক্রি হওয়া সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ