নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভারত সীমান্তবর্তী রাজশাহীর পৰা, গোদাগাড়ী ও চারঘাটে গরু-মহিষ রেজিস্ট্রেশন বা জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। জেলার সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলে কোন বাসিন্দা যদি গরু, মহিষ বা বাছুর পালতে চান তাহলে তাকে সেইসব পশুর নিবন্ধন করতে হয়।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং গোদাগাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিজিবি ক্যাম্প এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে গিয়ে পশুর মালিকদের নিবন্ধন ও হালনাগাদের এই কাজটি করতে হয়।

জানা গেছে, ভারত থেকে গরু-মহিষ চোরাচালান বন্ধে সীমান্তবর্তী এলাকায় গরুর বাছুর হওয়ার সাথে সাথে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জন্মনিবন্ধন করতে হয়। সীমান্তবর্তী জেলার ভারত এসব এলাকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পরিবারের উপার্জনের উৎস গরু, ছাগল ও মহিষ পালন। সেসব এলাকায় প্রায় ২৫ বছর আগে চালু হয় গরু-মহিষের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। গরু- মহিষ নতুন জন্ম নিলে ও ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অবগত করতে হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

সূত্র জানায়, জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার প্রতিটি ক্যাম্পে প্রায় ৩০ জন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। মোট ১২টি বিওপির মধ্যে পদ্মা নদীর ওপারে রয়েছে ৪টি। তবে শুধু গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বাড়িতে রয়েছে ২৫ হাজার গরু। বর্তমানে প্রতিটি পরিবারে গড়ে ৫-৭টি করে গরু পালন করা হচ্ছে। প্রতিটি গরু ও মালিকের যাবতীয় তথ্য রয়েছে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে ও ইউনিয়ন পরিষদে।

তথ্যমতে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও বিজিবি ক্যাম্পে রেজিস্ট্রি খাতায় নথিভুক্ত রাখা হয় গরু-মহিষের মালিকের নাম ও গবাদিপশুর সংখ্যা। গরু-মহিষের মালিকানা পরিবর্তন করলেও জানাতে হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিজিবি কর্মকর্তাদের। সেখান থেকে সার্টিফিকেট দেয়া হয় ক্রেতা ও বিক্রেতাকে।

এছাড়া গাভীর বাচ্চা জন্ম নিলে ১০ দিনের মধ্যে দুই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তালিকাভুক্ত করতে হয়। এতে রোধ হয় চোরাচালান। ফলে কারো গবাদিপশু হারিয়ে গেলে সহজেই খুঁজে বের করতে পারে বিজিবি। যে কারণে গবাদিপশুর মালিকরা তালিকাভুক্ত করেন স্বেচ্ছায়।

আষাড়িয়াদহ চর ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়ির সামনে বেঁধে রাখা হয়েছে একাধিক গরু। মালিকরা দেখাশোনা করছেন গবাদিপশু কয়েকজন রাখাল মাঠে চরিয়ে সংখ্যা হিসাব করে বাসায় নিয়ে আসছেন গরু-মহিষ।

ইউনিয়নের চরমাঝারদিয়াড় এলাকার বিউটি বেগমের আছে ৭টি গরু ও ৪টি ছাগল। তিনি বলেন, বর্ডার দিয়ে অপরিচিত ব্যক্তিরা গরু নিয়ে এসে দেশি গরুর মধ্যে বেঁধে রাখতেন। এতে আমাদের ও তাদের গরু একত্র হয়ে যেত। কিন্তু এখন ভারত থেকে গরু আনার পর আমাদের গরুর সঙ্গে বেঁধে রাখলেও খাতায় রেজিস্ট্রি পদ্ধতি চালু থাকায় বাইরের গরু সহজেই চেনা যায় এতে গরু-মহিষ হারানোর শঙ্কা দূর হয়েছে।

একই এলাকার হামিদা বেগম নামে এক গৃহিণী জানান, তার বাড়িতে একটি গাভী রয়েছে। কয়েক দিন পর বাচ্চা হলে বিজিবি ক্যাম্পে ১০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রিভুক্ত করতে হবে। গরুর বর্ণনা লিখে নেবেন বিজিবি সদস্য। সেটির একটি অনুলিপি আমার কাছেও থাকবে। গরু বিক্রি করতে হলে ক্যাম্পে গিয়েই নিতে হবে ছাড়পত্র।

এ বিষয়ে গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সানাউল্লাহ বলেন, গরু-মহিষ রেজিস্ট্রির নিয়মটি অনেক পুরনো। তবে বছর চারেক আগে থেকে বেশ কড়াকড়ি করা হচ্ছে বিজিবির পক্ষ থেকে। এতে লাভ হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই। বিজিবির কাছে পুরো ইউনিয়নের তথ্য রয়েছে। চোরাচালান ও অপরাধ দমনে এটা সত্যিই ইতিবাচক।

এ ব্যাপারে বিজিবি রাজশাহীর অধিনায়ক সাব্বির আহম্মেদ বলেন, গরু-মহিষ রেজিস্ট্রির অনেক ইতিবাচক ফলাফল দৃশ্যমান হয়েছে। এতে একজনের গরু অন্যজন ইচ্ছে করলেই নিজের দাবি করতে পারে না। হারিয়ে গেলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। এমনকি গরু-মহিষ মাঠে চরতে সীমানা পেরিয়ে ভারতে চলে গেলেও বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরিয়ে আনা যায়। এ রকম কয়েকটি নজিরও রয়েছে। তাছাড়া অবৈধভাবে গরু দেশে এলে তা ধরা সম্ভব হয়। এতে রাজস্ব ফাকি রোধ হচ্ছে। আর চোরাচালান তো উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছেই।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ