আবু হাসাদ, পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ফসলি জমিতে রাসয়ানিক সার ব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরশক্তি হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে চাষিরা প্রতিবছর মোটা অংকের টাকা ব্যয় করছেন। ফলে ব্যায় কমাতে এবং জমির উর্বরতা বাড়াতে বাড়ছে কেঁচো সার উৎপাদন।

জানা গেছে, চাষিরা জমিতে রাসয়ানিকের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারে বেশী আগ্রহী হচ্ছেন। আর জমির উর্বরতা ফিরে আসার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে ফলনও হচ্ছে আশানুরুপ। এদিকে চাষিদের মধ্যে জৈব সারের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। আর কৃষকদের চাহিদা পুরণে জৈব সার উৎপাদনে কাজ করছেন প্রায় দুইশতাধিক উদ্যোক্তা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক উদ্যােক্তা কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন। সেই সাথে হাতে গোনা কয়েকজন উদ্যোক্তা বিভিন্ন ওষুধি লতা-পাতার সমন্নয়ে তৈরি করছেন ট্রাইক্রো কম্পোস্ট সার। এর মধ্যে এএসসিপি-২ প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন ১৫০ জন সদস্য। বাকিরা প্রশিক্ষন নিয়ে ব্যাক্তি উদ্যােগে কেঁচো কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। উদ্যোক্তারা প্রতিবছর প্রায় ৮ হাজার টন কেঁচো কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ১২ কোটি টাকার অধিক।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সাকলাইন বলেন, কেঁচো কম্পোস্ট গুলো সাধারনত মাটি চাড়িতে ভালো তৈরি হয়। কম্পোস্ট তৈরিতে প্রতিটি চাড়িতে ২৫০ গ্রাম কেঁচো প্রয়োজন হয়। আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ব্যবহারের উপযোগি হয়ে উঠে। এভাবে একটি চাড়িতে বছরে ২০০ কেজি পর্যন্ত কম্পোস্ট উৎপাদন করা যায়।

বিড়ালদহ এলাকার চাষি হারুন-অর রশিদ বলেন, বিগত সময়ে প্রতিটি চাষিরা কৃষি কাজের জন্য তাদের বাড়িতে কয়েক জোড়া গরু-মহিষ পুষতেন। এতে কাজের পাশাপাশি গরু-মহিষের গোবর জমিয়ে রেখে তা জমিতে ব্যবহার করতো। বর্তমানে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা যান্ত্রিক হয়ে গেছে। সে কারণে চাষি থাকলেও গোয়ালে নেই গরু-মহিষ। আর ফসলি জমি গুলোতে গোবর পরির্বতে রাসয়ানিক সারের ব্যবহার বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমি গুলো ক্রমেই উর্বরতা কমে যাচ্ছে। সচেতন চাষিরা এখন রাসয়ানিক ছেড়ে জমি গুলোতে জৈব সার ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

শিবপুর হাট এলাকার নারী উদ্যোক্তা রুমা পারভীন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় গত তিন বছর আগে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি শুরু করেছি। সেই সাথে ট্রাইক্রো কম্পোস্টও তৈরি করছি। বর্তমানে চাষিদের মধ্যে কম্পোস্ট সারের ব্যাপক চাহিদা। প্রতি কেজি কম্পোস্ট বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, কম্পোস্ট উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় আমার খামাড় দেখতে এলাকার অনেকেই আসছেন। এদের মধ্যে অনেকেই নতুন করে কেঁচো কম্পোস্ট উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

জিউপাড়া ইউনিয়নের সরিষাবাড়ি গ্রামের উদ্যােক্তা শাহিন রাকিব সরল বলেন, বর্তমানে আম, পেয়ারা, কলা, মাল্টা, ড্রাগন ফলসহ বিভিন্ন বানিজৈক ফসল উৎপাদনকারী চাষিরা রাসায়নিক ছেড়ে জৈব সার ব্যবহারে বেশী আগ্রহী। আমাদের উৎপাদিত কেঁচো সার সংগ্রহ করতে এই উপজেলার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার চাষিরা আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখেন। সার প্রস্তুত হলে তারাই আমাদের খামাড় থেকে নিয়ে যান। আর এতে করে কেঁচো কম্পোস্ট উৎপাদনকারীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভূঁইয়া বলেন, এই উপজেলায় দুই শতাধিক উদ্যােক্তারা জৈব সার উৎপাদনে কাজ করছেন। বর্তমানে বাজারে জৈব সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর কেঁচো ও ট্রাইক্রো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে লাভবান হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসছেন। আমরা নতুন ও আগ্রহী উদ্যােক্তাদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কেঁচো সার উৎপাদনে বিভিন্ন উপকরণ পেতে সহযোগিতা করছি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ