মোফাজ্জল বিদ্যুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর পুঁই ও পালং শাক ট্রাকযোগে নেওয়া হচ্ছে ঢাকায়। তাই ক্ষেত থেকে শাক তোলা, প্রক্রিয়াজাত এবং বান্ডিল করাসহ সব মিলিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহীর রাজপাড়া, পবা এবং শাহ মখদুম থানার প্রতিটি গ্রামে ধানী জমি, মাঠে, সড়ক সংলগ্ন খোলা জায়গা ও বাড়ির আঙিনাজুড়ে রয়েছে সবুজ পালং ও পুঁই শাক। পোকার আক্রমণ থেকে শিমকে রক্ষায় যত্ম নেওয়া ও বিক্রির জন্য ক্ষেত থেকে শাক তোলা, প্রক্রিয়াজাত এবং বান্ডিল করা নিয়ে ক্লান্তিহীন সময় পার করছেন কৃষকরা।

ক্ষেত থেকে পালং তোলে বান্ডিলে সাজাতে হবে, কেবল সেদিকেই খেয়াল কৃষক সাজ্জাদ হোসেনের। তার মতো রাজশাহীর পবা, রাজপাড়া এবং শাহ মখদুম থানার হাজারো কৃষকের ব্যস্ততা এখন পুুঁই ও পালং শাকের ক্ষেতকে ঘিরে।

২০ বছর ধরে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত রাজপাড়া থানার বসুয়া এলাকার কৃষক সাজ্জাদ হোসেন। জমি লিজ নিয়ে পঁচিশ কাঠা জমিতে পালং এর চাষ করেছেন। বছর চুক্তি জমি লিজ নিয়েছেন ২০ হাজার টাকায়। আর শুধু পালং চাষ করতে খরচ হয়েছে তার ৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, যা খরচ হয়েছে সেই টাকা হয়তো পাবো। কিন্তু লাভ হবে না। গত ১৫ দিন আগে শাককের যা দাম ছিলো সেটা থাকলে ভালো লাভ পাওয়া যেতো।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা ক্ষেত থেকেই শাকের জমি কন্টাক্ট দিয়ে দিই। ব্যবাসয়ীয়রা বান্ডিল করে বিক্রি করে। একটি শাকের বান্ডিলের দাম বর্তমান ১৮০০ টাকা। আগে ছিলো ৩৫০০ টাকা। প্রতি বান্ডিলে পাঁচ মণ করে শাক থাকে। বর্তমানে শাকের দাম কমে যাওয়ায় কিছুটা ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারি।

একই এলাকার কৃষক আব্দুল গাফ্ফার জানান, বাবা-চাচারাও কৃষি কাজ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় ৩০ ধরে কৃষির কাজে যুক্ত। এ বছর দুই বিঘা জমিতে পুঁই শাকের চাষ করেছি। বর্ষা মৌসুমে অতি বর্ষণ ও ঢলানি পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুইঁ শাকের চাষ করেছি।

আব্দুল গাফ্ফার বলেন, সার, বীজ এবং শ্রমিকের দামও বেশি। আগে শাক-সবজির ভলোই দাম ছিলো। কিন্তু গত এক সপ্তাহ থেকে দাম কমে যাওয়ায় খরচ তুলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। ক্ষেত থেকেই ব্যবসায়ীরা জমি কনটাক্ট নেন। সেখান থেকে তারা ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাক যোগে পাঠান।

শাক ব্যবসায়ী সুমন জানান, শাক-সবজির ভালো দামে দেখে এক বিঘা জমি কনটাক্ট নিয়েছি ২০ হাজার টাকায়। গত এক সপ্তাহ থেকে শাক-সবজির দাম কমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারি।

শাকের পাইকারি ব্যবসায়ী নাজমুল হক জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় দুই ট্রাকে করে পুঁই ও পালং শাক ঢাকায় নিয়ে যায়। যেহেতু এখন তেমন শীতের কোন সবজি উল্লেখযোগ্য ভাবে উঠেনি, সেহেতু শুধু পুঁই ও পালং শাক ঢাকায় নিয়ে যায়। এ ছাড়া সব ধরনের শাক-সবজি ঢাকার গাজীপুরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলাতে রাজশাহীর শাক-সবজি পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, প্রতি বান্ডিলে পাঁচ মণ করে শাক থাকে। আর দুইটি ট্রাকে সত্তর বান্ডিল পর্যন্ত শাক নিয়ে যাওয়া যায়। রাজশাহী সিলিন্দা এলাকা থেকে দুই ট্রাকে প্রতিদিন ৩ শত ৫০ মণ শাক ঢাকা শহরে নিয়ে যায়।

রাজশাহীর পুঁই পালং যাচ্ছে ঢাকায়। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার .কমকে বলেন, জেলায় ৯ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শাকের চাষ হয়েছে। পুঁই শাক গ্রীষ্মকালীন হলে এখন সারা বছরই পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু রাজশাহী শাক-সবজি উদ্বৃত্ত জেলা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে শাক-সবজি পাঠান এ অঞ্চলের চাষিরা। তুলনামূলক এখনও ভালো দাম পাচ্ছেন রাজশাহীর কৃষকরা।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ