জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী: মধুমাস আসার আগেই রাজশাহীর বাজারে দেখা দিয়েছে রসালো ফল লিচু। গত কয়েকদিন ধরেই নগরীর বিভিন্ন বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গুটি জাতের লিচু। তবে, এসব ফল পরিপক্ক নয় বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র।

নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, লক্ষ্মীপুর, বিন্দুরমোড়, স্টেশন ছাড়াও ওয়াক্তিয়া মসজিদের সামনে লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। লাল রঙের আভা এইমাত্র শুরু হয়েছে-এমন লিচু ঝুড়ির মধ্যে সাজানো। ভেজা চটের বস্তা দিয়ে ঢাঁকা। মৌসুমের শুরুতেই চোখের সামনে লিচু দেখে অনেকে এগিয়ে এলেও কিনছেন না। চড়া দাম হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা।

দাম শুনে বেশি কিনতে না পারলেও কিনছেন ১০টি থেকে ৫০ টি। এসব লিচুর প্রতি ১০০টির দাম হাঁকা হচ্ছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। কিছু লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা দরে। ফলের গায়ে কালচে দাগ পড়ায় এসবের দাম একটু কম।

মহানগরের উপশহর এলাকার আব্দুল হালিম বলেন, লিচু দেখে এগিয়ে এসেছি। যে দাম, তাতে কেনা গেলো না। আর এখন লিচু পরিপক্ক হয়নি। ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে লিচু ভাঙার কারন বেশি টাকা পাওয়া। এগুলো গুটি জাতের মানে, দেশি জাতের লিচু। টক হবে এটা বলা যায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, রাজশাহীতে গাছে গাছে লিচু পাকতে শুরু করেছে। জেলায় এ বছর ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচুগাছ রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৭ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার ফলন কম হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে মূলত উন্নতমানের জাত হিসেবে পরিচিত বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাদমি, বেদানা, কালীবাড়ি, চায়না-৩ জাতের লিচু। আবার আমাদের এখানকার উদ্ভাবিত বারি-১ লিচু ইতোমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। পরিপক্ক লিচু আসতে আরো একটু সময় লাগবে।
ফলন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার ফলন একটু কম হবে। এক বছর লিচু বেশি আসলে পরের বছর কম আসে। এবার ফুল থেকে গুটি আসা পর্যন্ত নানারকম বৈরী আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়েছে লিচুগাছ।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের টক-মিষ্টি স্বাদের বারি-১ বাজারে আসতে শুরু করেছে। যা আকারে বোম্বাই বা মাদ্রাজি জাতের চেয়ে অনেক ছোট। এরপর বাজারে আসবে বারি-২ ও বারি-৩। বারি জাতের লিচু এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে পেকে যায়। থাকবে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরই মাঝে আসবে বোম্বাই, চায়না-৩, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়িসহ অন্য জাতের লিচু। সব মিলিয়ে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টসটসে রসে ভরা লিচু থাকবে বাজারে।

মহানগরের সাহেব বাজারের লিচু ব্যবসায়ী শামীম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বাজারে এখোনো সেভাবে লিচু আসেনি। আমদানি না থাকায় বর্তমানে লিচুর দাম বেশি। আগামী দুই সপ্তার মধ্যেই প্রচুর পরিমাণে লিচু বাজারে আসতে শুরু করবে। এছাড়া দিনাজপুর ও রাজশাহীর লিচু ভরপুর হলেই দাম কমে আসলে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ