জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী: করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য পৃথক দুইটি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার (২৯ মার্চ) থেকে হাসপাতালের ২৫ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এখন থেকে করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা সাইফুল ফেরদৌস জানান, এটি প্রাথমিক প্রস্তুতি। প্রয়োজন হলে করোনা চিকিৎসায় পরে আরও নতুন ব্যবস্থাপনা আসতে পারে।

এর আগে গত বছরের মার্চে দেশে করোনার প্রথম ওয়েভ শুরু হলে রামেক হাসপাতালের উত্তরে থাকা ওটি (অপারেশন থিয়েটার) বিভাগের পাশে ২৯ ও ৩০ নম্বরসহ আইসিইউ ওয়ার্ডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এছাড়া করোনার ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে রাজশাহীর খ্রিস্টান মিশন হাসপাতাল ভাড়া নেওয়া হয়েছিলো। করোনা রোগী কমে যাওয়ায় পরে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে, রাজশাহী বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে সর্বোচ্চ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৯ মার্চ) রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভাগের আট জেলায় এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৪০৮ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহীতে।

এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ জন, নওগাঁয় ২৬ জন, নাটোরে ১৩ জন, জয়পুরহাটে ১০ জন, সিরাজগঞ্জে ১৮ জন এবং পাবনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৮ মার্চ) বিভাগে নতুন ১০৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

এ দিন সুস্থ হয়েছেন ২৭ জন। বিভাগে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ হাজার ৫৯৯ জন। এদের মধ্যে ২৪ হাজার ৭৩২ জন সুস্থ হয়েছেন। বিভাগে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ৭৪ জন কোভিড-১৯ রোগী।

করোনা সংক্রমণ রোধে যে ১৮ দফা নির্দেশনা

করোনা সংক্রমণ রোধে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে ১৮ দফার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে । পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আগামী অন্তত দুই সপ্তাহ এই নির্দেশনা পালন করতে হবে।

আজ সোমবার (২৯ মার্চ ২০২১) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার নিম্নরূপ সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করেছে:

১. সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ ধর্মীয়/ অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত
এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে/ জন্মদিনসহ যেকোনও সামাজিক অনুষ্ঠান
উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।

২. মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

৩. পর্যটন/ বিনোদন কেন্দ্র সিনেমা হল/ থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের
মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে।

৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।

৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে। প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে।

৬. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

৭. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/ উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-কিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

৯. শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

১০. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

১১. অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/ আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০ টার পর বাইরে বের হওয়া
নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক
না পরলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৩. করোনায় আক্রান্ত/ করোনার লক্ষণ দেখা দিলে ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির। ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদেরও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠান/ শিল্প কারখানাসমূহ
৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/ অসুস্থ/ বয়স ৫৫-ঊর্ধ্বো কর্মকর্তা/ কর্মচারীর বাড়িতে
অবস্থান করে কাজ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৬. স্শরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনও ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

১৭. হোটেল-রেঁস্তোরাসমূহে ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক মানুষের প্রবেশ করতে হবে।

১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি
পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারের এ নির্দেশনার বিষয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন,  করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে  মেনে চলার অনুরোধ করছেন তিনি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ