নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা যখন রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কঠিন করে তুলেছে, তখন দেশটি থেকে ৩০ হাজার টন সার কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

গতকাল এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে না বলে তিনি আশাবাদী আর তখন রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানির সংকটও কেটে যাবে।

রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পাশের দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মস্কোর ওপর। রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিশ্বের প্রধান আর্থিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তাদের মিত্ররা।

এর মধ্যেই গতকাল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের প্রস্তাবে রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক করপোরেশনের (প্রোডিনটর্গ) কাছ থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার টন এমওপি সার ১৫০ কোটি ২১ লাখ ২৩ হাজার ২২০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ সারের চাহিদার বড় একটি অংশ আমদানি করে মেটায়। আর রাশিয়া থেকে আগেও সার আমদানি করা হতো।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমরা বরাবরই তাদের কাছ থেকে সার নিয়ে আসছি। এ জন্য এবারও চেষ্টা করছি তাদের কাছ থেকে আনার জন্য।’ রাশিয়া যদি কোনো কারণে সার না দেয়, তাহলে বিকল্প পথ খোঁজা হবেÑজানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার আগ পর্যন্ত আমরা তাদের কাছ থেকেই আনার চেষ্টা করব।’

বর্তমান পরিস্থিতি রাশিয়ার কাছ থেকে সার আমদানি সম্ভবপর হবে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার কাছ থেকে সুইফট সিস্টেম কেড়ে নেয়া হয়েছে। তবে আমরা আশা করি, যুদ্ধ থেমে যাবে, খুব লম্বা সময় চলবে না। সেই হিসাবেই সেখান থেকে সার কেনার চেষ্টা করছি। সুইফটের কারণে যদি আমরা পেমেন্ট করতে না পারি, সে ক্ষেত্রে আমাদের কারেন্সি সোয়াপ করে অন্য রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা বেরিয়ে আসবে।’

বৈঠকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি কাজের জন্য ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে ৪৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭০ টাকায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কাফকো বাংলাদেশের কাছ থেকে ১৪৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কিনছে। বৈঠকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবটিও অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে গম সংরক্ষণের জন্য একটি স্টিল সাইলো নির্মাণে ৫৩৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৩৪ টাকায় কাজ দেয়া হয়েছে কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্য জিএসআই গ্রুপকে।

অন্যদিকে বুড়িগঙ্গা নদী (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলি-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) পুনরুদ্ধার (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের লট-৩ ও ৪-এর পূর্ত কাজের ব্যয় ৪৯ কোটি ৪০ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৯ টাকা বাড়িয়েছে সরকার।

সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১১টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয়ের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দুটি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবনা ছিল। এছাড়া টেবিলে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১২টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৭৩৭ কোটি চার লাখ ১৩ হাজার টাকা।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বুড়িগঙ্গা নদী (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলি-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) পুনরুদ্ধার (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের লট-৩-এর পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২২ কোটি ৭০ লাখ ১৯ হাজার ৬৯৮ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব যৌথভাবে এলএ এবং টিটিএসএল ঢাকাকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই প্রকল্পের লট-৪-এর পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২৬ কোটি ৭০ লাখ ১৩ হাজার ২০১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব যৌথভাব কেএসএ এবং এলএ কে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ