মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সবচেয়ে বড় নদী ধরলার তীরবর্তী একটি ইউনিয়ন বড়ভিটা। নদী তীরে এ ইউনিয়নটির অবস্থান হওয়ায় প্রতিবছর ছোট আকারের বন্যাতেই প্লাবিত হয় গোটা ইউনিয়ন। বন্যার পানিতে ডুবে যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ।

বন্যায় আমনের ফসল হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় বেশিরভাগ কৃষককে। আমনের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতিবছর অনেক আশায় বুক বেঁধে বোরো চাষাবাদ করেন কৃষকেরা। এবারেও মাঠ জুড়ে বোরো আবাদ করেছেন তারা। কিন্তু জলাবদ্ধতা তাদের এই ফসলের জমিতে গলার কাটা হয়ে বিধেছে।

অন্যের কাছে ধার দেনার টাকায় করেছেন বোরোর চাষাবাদ। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিবিড় পরিচর্যা করে স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু চৈত্রের ভারী বৃষ্টি আর পানি নিস্কাসনের পথবন্ধ করায় শেষ মূহুর্তে তাদের আশার পাঁতে ছাই! জলাবদ্ধতায় ফসল হারানোর শঙ্কায় বোবাকান্না কাঁদছেন ইউনিয়নটির বড়ভিটা মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার শতশত কৃষক।

এলাকাটির ফসলি জমির পানি নিস্কাসনের জন্য একমাত্র ব্রীজটির মুখ ভরাট করে বসতবাড়ি গড়ে তোলায় পানিতে তলিয়ে গেছে শতশত বিঘা জমির বোরোধান ক্ষেত। আর শত বছরের পানি নিস্কাসনের পথরোধ কারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নাওডাঙ্গা গ্রামের ফসলি জমির পানি নিস্কাসনের জন্য বড়ভিটা মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন ব্রীজটির মুখে মাটি ভরাট করে এলাকার একটি পরিবার বসতবাড়ি গড়ে তুলছেন। আর ব্রীজটির মুখ ভরাট করায় বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে নাওডাঙ্গা বিলের প্রায় ৫০ একর জমির শীষ বেরুনো বোরোধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

হুমকির মুখে রয়েছে আরো ৫শত একর জমির ধানক্ষেত। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বেলাল হোসেন, কামাল উদ্দিন, আমিনুর, শামিম, নাজমুল, পুতুল, মুকুল বলেন, বন্যার কারণে আমরা আমন মৌসুমে ফসল ঘরে তুলতে পারি না। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।

তারা জানান, বোরোধান চাষাবাদ করে আমাদের সারা বছরের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হয়। ব্রীজের মুখ ভরাট করায় এবারে ধানের শীষ বেরুনো বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গিয়ে পঁচন ধরেছে। ক্ষেতের ধান পঁচে নষ্ট হয়ে গেলে কি খাবো ভাবতে পারছি না। আমরা দ্রুত এর একটা সমাধান চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দরখাস্ত দিয়েছি।

আরও পড়ুন: ফুলবাড়িতে পেয়ারা চাষে বড় সাফল্য, নয় মাসেই কয়েক লাখ টাকা বিক্রি

বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আঃ বাতেন বসুনিয়া বলেন, প্রায় একশ বছর আগে থেকে এই ব্রীজ দিয়ে জমির পানি নেমে যাচ্ছে। তা হঠাৎ করে বন্ধ করায় কৃষকের ফসলের আজকে এই অবস্থা। আমি প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করছি কৃষকদের ফসল বাঁচানোর জন্য দ্রুত ব্রীজটির ভরাট করা মাটি সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শত বছরের পানি নিস্কাসনের পথরুদ্ধ, হুমকিতে ক্ষেতের ফসল এ অবস্থা থাকলে কৃষকেরা ধানের আবাদ থেকে মুখ ফুরিয়ে নিবে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পরার সঙ্কা রয়েছে।