নিরাপদ সবজি

আব্দুল মান্নান, শরিয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরে নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আয় বাড়ছে কৃষকদের। দিন দিন এ জেলার সবজি চাষিদের জৈবসার এবং বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে।

এর ফলে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি আয়ও বাড়ছে তাদের। জেলার জাজিরা, নড়িয়া এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে, দেখা যায় সবজি উৎপাদনের জন্য চাষীরা ফসলের ক্ষেতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ বোর্ড সহ জৈব বালাইনাশক বিভিন্ন উপকরণ তারা ব্যবহার করেছে।

নিরাপদ সবজি চাষী ইদ্রিস মোল্লা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, এসডিএস এর ভাইদের পরামর্শে ধুন্দল ক্ষেতে ফেরোমন, হলুদ বোর্ড লাগানোর পর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ অনেকটা কমে গেছে। ক্ষেতে তেমন পোকা-মাকড় নাই বললেই চলে। ফাঁদ লাগানোর পর কীটনাশক তেমন দিতে হয়নি ফলে খরচ আমার কিছুটা কমেছে। আর জৈব সার ব্যবহার করাতে রাসায়নিক সারও আমার বেশি লাগেনি।

সবার এসব উপকরণ ব্যবহার করা উচিত বলে উল্লেখ করে এ চাষি বলেন, এতে খরচ কম হয় লাভ বেশি থাকে এবং নিরাপদ সবজি পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইফাদ এর অর্থায়নে এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগীতায় Promoting Agricultural Commercialization and Enterprises (PACE) Project এর আওতায় নিরাপদ পদ্ধতিতে সাধারন ও উচ্চমূল্যের সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষকের আয়বৃদ্ধিকরণ উপ-প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা, নড়িয়া এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১২ হাজারের বেশি কৃষকদের নিয়ে নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু হয়।

এসব কৃষকদের নিয়ে সাধারণ (ধুন্দল, চিচিঙ্গা, শসা, করলা লাউ, বেগুণ,টমেটো ইত্যাদি) এবং উচ্চ মূল্যের স্কোয়াশ, ব্রোকলি, লেটুস, ক্যাপসিকাম সহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ, জৈব সার, জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার পদ্ধতি, ভার্মি কম্পোস্ট, অনুজীব সার তৈরিসহ কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি)।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের আঘাতে আঘাতে জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক, ক্ষুধা, দারিদ্রতা, অসহায়ত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ কৃষি নির্ভর এ মানুষগুলোর ভাগ্যন্নোয়নে ১৯৯১ সাল থেকে নিরলসভাবে কাজ করছে স্থানীয় এই বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি।)।

আরও পড়ুন: বারোমাসি সজিনা চাষে বিঘায় লাভ দেড় লাখ টাকা

এসডিএস এর পরিচালক (এমএফ) বি এম কামরুল হাসান (বাদল) বলেন, শুরু থেকেই নিরাপদ ও উচ্চমূল্যের সবজি উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ সৃষ্টি করতে আমরা কাজ করছি। এ জন্য উপকরণ সরবরাহ, কারিগরি সহায়তা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান এবং মনিটরিং করছি। এ কাজে আমাদেরকে শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সহযোগিতা করছে।

আরও পড়ুন: আগাম প্রস্তুতি নিয়ে চাষ করুন লাভজনক ফসল ছোলা, জেনে নিন চাষ পদ্ধতি

শরীয়তপুরে নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আয় বাড়ছে কৃষকদের উল্লেখ করে তিনি জানান, গঙ্গানগর, কাঁচিকাটা ও চরআত্রা এই তিনটি এলাকাতেই এ প্রকল্পের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ ও এ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে কৃষকেরা পরিমিত মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগে অভ্যস্ত হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বিষমুক্ত ও কম খরচে সবজি উৎপাদনে শরীয়তপুরের তিনটি উপজেলার চরাঞ্চলে সবজি ক্ষেতে হলুদ ফাঁদ, ফেরোমন বসানো হয়েছে। ফলে পোকা দমনে কৃষককে কীটনাশক বা বিষ ব্যবহার করতে হয় না। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত সবজি ক্রেতার হাতে তুলে দেয়া।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, আমরা নিরাপদ ফসল উৎপাদনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি ও ফল উৎপাদনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি। এ কাজ আমরা সংস্থা ও ব্যক্তিপর্যায়ে আরো বেশি বেশি করার জন্য উৎসাহিত করছি।

এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমার জানা মতে, শরীয়তপুরের বেসরকারি সংস্থা এসডিএস দুর্গম চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় অনেক আগে থেকেই জৈব কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তারা ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার, হলুদ ফাঁদ ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদসহ বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছে।