কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: শিম আমদের দেশে একটি শীতকালীন সবজি। এটি ছোট বড় প্রায় সকলেরই একটি প্রিয় তরকারী। এটি খেতে অনেক পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও উপাদেয় সবজি। আমাদের দেশে বর্তমানে ব্যপকহারে এই শিমের চাষ করা হচ্ছে। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে এই শীতকালীন সবজি শিমের চাষ করতে পারেন। আসুন জেনে নেই কিভাবে বাড়িতে শিমের চাষ করবেন।

শিম চাষে টব/মাটি তৈরি করবেন যেভাবে

আমাদের দেশে এঁটেল মাটি ছাড়া প্রায় সবধরণের মাটিতে শিমের চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে  দো-আঁশ মাটিতে শিমের চাষ ভাল হয়।

টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই

শিম চাষ করার ক্ষেত্রে আপনি মাঝারি অথবা বড় সাইজের মাটির টব ব্যবহার করতে পারেন এছাড়াও আপনি ইচ্ছা করলে হাফ সাইজের ড্রাম ব্যবহার করতে পারেন।

জাত বাছাই করা

আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি জাতের শিম চাষ করা হয়ে থাকে। তাঁর মধ্যে বারি-১, বাইনতারা, বারি-২ হাতিকান, বারি-৫, ইপসা শিম, বারি-৬, চ্যাপ্টা শিম, ধলা শিম, পুঁটি শিম, ঘৃত কাঞ্চন, সীতাকুন্ডু, নলডক ইত্যাদি অন্যতম।

চাষ/রোপনের সঠিক সময়

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় যেকোন সময়ে শিমের চাষ করা যায়। তবে শ্রাবণ মাসের শেষের দিক থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত শিম লাগানোর উপযুক্ত সময়। আর যদি আগাম চাষ করতে চান তাহলে আষাঢ় থেকে পুরো ভাদ্র মাস পর্যন্ত শিম গাছ লাগানো যায়।

শিমের বীজ বপন ও সঠিক নিয়মে পানি সেচ

শিমের চারা লাগানোর ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে চারা তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি পাত্রে ৫-৬ টি করে বীজ বুনে দিতে হবে। এরপর যখন বীজ থেকে চারা উৎপাদিত হবে তখন প্রতিটি টবে সবল সুস্থ্য চারা রেখে দুর্বল চারা উপড়ে ফেলতে হবে।  চারা গজানোর পর প্রথম দিকে নিয়মিত পানি দিতে হবে। এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত গরম পড়লে বেশী পানি দিতে হবে।

চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল

গাছের চারা একটু বড় হলে একটা ছোট লাঠি অথবা বাঁশ দিয়ে গাছকে বেঁধে দিতে হবে। এরপর যত্নসহকারে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। গাছে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। এবং শিম গাছের গোড়ায় সবসময় মাটি দিতে হবে।

শিম গাছে সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ

শিম গাছে সবসময় বাড়িতে তৈরি জৈব সার দিবেন যেমন তরকারীর খোসা, ময়লা আবর্জনা, হাস মুরগীর বিষ্ঠা, কাঠ কয়লা ছাই ইত্যাদি। এছাড়াও অজৈব সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি,  মিউরেট অব পটাশ,  জিপসাম,  জিংক অক্সাইড ইত্যাদি দিতে পারেন।

পোকামাকড় দমন ও বালাইনাশক/কীটনাশক কিভাবে প্রয়োগ করবেন

শিম গাছে অতিরিক্ত গরমে থ্রিপস পোকার আক্রমণ ঘটে থাকে। এছাড়াও জাব পোকার আক্রমণও হতে পারে। এসব পোকার আক্রমণ হতে শিম গাছকে রক্ষা করতে হলে নিয়মিত ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক দিতে হবে।

যত্ন ও পরিচর্যা

শিম গাছের নিয়মিত যত্ন করতে হবে। গাছের গোড়ায় যদি আগাছা জন্মে তাহলে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। মাঝে মাঝে অতিরিক্ত আগা ও লতাপাতা ছাটাই করে দিতে হবে। গাছে অনেক বেশী পরিমাণে মাটি দিতে হবে। গাছে ফুল আসলে পুরুষ ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণু সংগ্রহ করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরের মাধ্যমে পরাগায়ন (কৃত্রিম পরাগায়ন) ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব।

এবার জেনে নেওয়া যাক শিমের খাদ্য গুণাগুণ

শিমে অনেক ধরণের খাদ্য গুনাগুন রয়েছে। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ পাওয়া যায়।

শিম  সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

গাছে শিম সম্পূর্ণ রূপে পরিপক্ক হলে তবেই শিম সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়াও শিম শুকিয়ে তাঁর বীজ সংরক্ষণ করা যায়। এবং এই বীজ অনেকদিন ধরে রেখে খাওয়া যায়।

শিম পাওয়া যাবে যে পরিমান

ঠিকমত যত্ন ও পরিচর্যা করতে পারলে কয়েকটি শিম গাছ হতে আপনি যে পরিমান শিম পাবেন তা   আপনার পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে আপনি বিক্রিও করতে পারবেন।