মোফাজ্জল বিদ্যুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভাগ্য বদলের চেষ্টায় আগামজাতের শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকছেন রাজশাহীর চাষিরা। সোমবার (০৯ নভেম্বর ২০২০) জেলার কয়েকটি উপজেলায় বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, রবি বা শীত মৌসুমের শীতকালীন সবজি নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শীত পুরোপুরিভাবে না এলেও শীতকালীন সবজিতে ভরে উঠেছে মাঠ। অনেক চাষি ক্ষেতের সবজি তোলা নিয়ে পার করছেন ব্যস্ত সময়। অনেকেই আবার ক্ষেতে কীটনাশক দিচ্ছেন। কেউ জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন, কেউ আবার নতুন করে প্রস্তুত করছেন আবাদের জমি। সবমিলিয়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, লাউ, মূলা, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে উঠেছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর জেলায় ১২ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমেও একই পরিমাণ জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেওয়া তথ্যে জেলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ২৩৩ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, জেলায় এ পর্যন্ত ৫৩৪ হেক্টর জমিতে লাল শাকের চাষ হয়েছে। ডাটা শাক ১৩০ হেক্টর, পালং শাক ২২৪ হেক্টর,পুঁইশাক ২০৩ হেক্টর, কলমি শাক ৭৭ হেক্টর, চালকুমড়া ৮৭ হেক্টও, ধনে পাতা ৫৮ হেক্টর, মটরশুটি ২০ হেক্টর, চিচিঙ্গা ০১ হেক্টর, ওলকপি ০৪ হেক্টর এবং ধুন্দল ২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এছাড়া টমেটো চাষ হয়েছে ৩ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে।

পাঁচ বছর ধরে পরের জমি লিজ নিয়ে সবজি চাষ করে আসছেন নগরের শাহমখদুম থানার পাতানি পাড়া এলাকার আক্কাস আলী। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, আড়াই বিঘা জমিতে সবজির চাষ করেছি। তবে সবজি চাষ করতে খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলক অল্প সময়ের মধ্যেই সবজি বাজারজাত করা যায়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রিও করা যায়। এতে কৃষকের বেশ লাভ হয়, যা অন্য ফসলে সম্ভব না।

একই এলাকার চাষি আলতাফ হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, ৮ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বেগুন, ঢেঁড়শ, পালংশাক, পুঁই শাক, ফুল কপি এবং বাঁধা কপির চাষ করেছি। চলতি বছর বন্যায় ব্যাপক সবজির ক্ষতি হয়েছে। তাই এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারও লাভের আশায় বিভিন্ন সবজি চাষ করেছি। তাছাড়া দামও ভালো রয়েছে।

নওদাপাড়া এলাকার সবজি চাষি সাজিমদ্দিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, সবজি চাষ করেই আমার সংসার চলে। এছাড়া ছেলে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচও আসে সবজি চাষ করেই। এছাড়া বিভিন্ন মৌসুমে সবজি চাষ করি। এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে দুই বিঘা পেঁপের বাগান পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাত বিঘা জমি লিজ নিয়ে আগাম শীতের সবজি চাষ করেছি।

বাগমারা উপজেলার কৃষক আব্দুর রশিদ ও আবুল কালাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, রবি বা শীত মৌসুমের সবজি প্রায় তিনভাগে চাষ করেন কৃষকরা। অনেকেই শীতের প্রথম ভাগে সবজি বাজারে তুলতে মাঠে নামেন। কারণ এই সময়ে সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। দ্বিতীয় ভাগে শীতের মাঝামাঝিতে সবজি হাটে-বাজারে তোলার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেন বেশকিছু কৃষক। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে এ সময়টাতে সবজির ভালো দাম মেলে। তবে শেষভাগে উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পাওয়া নিয়ে অনেকটা ঝুঁকি থাকে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এ বছর জেলায় ১২ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ হাজার ২৩৩ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই কম বেশি সবজি চাষ হয়। তার মধ্যে, পবা, মোহনপুর এবং দূর্গাপুরে বেশি পরিমাণ সবজি চাষ হয়। এ বছর সবজির চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, শীতের আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ইতিমধ্যে শীতের আগাম সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কৃষকরা দামও ভালো পাচ্ছেন। সবজি চাষে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে তৎপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

শীতকালীন সবজিতে ভাগ্য বদলের চেষ্টা রাজশাহীর চাষিদের। ক্ষেতে নিয়মিত কাজ করতে এতটুকু উপোষ নেই কারো। ভালো দামের আশায় পরিচর্যায় সারাদিন ব্যস্ত তারা। ইতোমধ্যে শীতের আগাম সবজি বাজারে বিক্রি করেছেন অনেকেই। তাতে আরো উৎসাহ-উদ্দীপনায় সবজি উৎপাদন করছেন চাষিরা।

এ্রগ্রিকেয়ার/এমএইচ