সঠিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণের কৌশল

এগ্রিকেয়ার প্রতিবেদক: ক্ষেত থেকে আলু তোলার পরই আলু নিয়ে কৃষকদের আলু নিয়ে বিপাকে পরার চিত্র ফুটে ওঠে। সঠিক সংরক্ষণের অভাবে পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি এ সমস্যায় ভুগেন তৃণমূলের আলু চাষীরা। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আলু সংরক্ষণ অন্যতম সমাধান।

তবে তিন থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত তেমন কোনো ক্ষতি ছাড়াই ঘরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। পদ্ধতিটি কম খরচ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।

এমনই সব মন্তব্য জানালেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) গবেষকরা। এসময়ে তারা সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আলু সংরক্ষণের ওপর জোর দেন। এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলো সাধারণ তাপমাত্রায় আলু সংরক্ষণের পদ্ধতি।

সঠিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণের কৌশল

বারি’র কান্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র পরিচালক ড. জালাল উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের মোট আলু উৎপাদনের চার ভাগের এক ভাগ হিমাগারে সংরক্ষণ সম্ভব হয়। বাকী আলু কৃষক সাধারণ অবস্থায় নিজেদের ঘরে রেখে দেন। ফলে সংরক্ষিত আলুর গুনাগুন আস্তে আস্তে নষ্ট হয়। তবে আলু সংরক্ষণে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

যে কাজগুলো করতে হবে: আলু গুদামজাত করার পর থেকেই আলুকে ঠিকমতো বাতাস চলাচলের মধ্য রাখতে হবে, যেন অক্সিজেনের অভাব না হয়। আলু সংরক্ষণের ঘরটির তাপমাত্রা স্বাভাবিক, অপেক্ষকৃত ঠাণ্ডা, সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে।

নির্বাচিত ঘরটিতে যদি আগের বছরে আলু রাখা হয় তাহলে অবশ্যিই ঘরটি ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে। তারপর কীটনাশক ছিটিয়ে পোকামুক্ত করে নিতে হবে।

আলু সংরক্ষণকালে নিম বা বিষকাটালী বা ল্যান্টানার শুকনা পাতা উপরে বিছিয়ে দেয়া ঙেতে পারে। এতে পোকার উপদ্রব থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

যেসব এলাকায় টিউবার মথ বা সুতলী পোকার আক্রমণ আছে সেখানে গুদাম ঘরের জানালায় অবশ্যই চিকন তারের জালি দিতে হয়। তাছাড়া আলুর স্তপ মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা যেতে পারে। আলু রাখার পর থেকে প্রতি ২০ থেকে ২৫ দিন পরপর আলুর গাদা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পঁচা, ভিজা বা কোনরকম পোকায় ধরা দেখা মাত্র সরিয়ে ফেলতে হবে।

যে কাজগুলো করা যাবে না: গুদাম ঘরে অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণ আলু রাখা যাবে না। এতে অক্সিজেনের অভাব হয়। ফলে সংরক্ষিত আলুতে কালো দাগ রোগ দেখা দিতে পারে। আলুতে সূর্যের আলো পড়তে দেয়া যাবে না। আলো পরলে আলু সবুজ রংয়ের হয় এবং চামড়ায় বিষাক্ত পদার্থের সৃষ্টি হয়।

নতুন ঘর তৈরির পদ্ধতি: আলু রাখার ঘরে মাঁচা বা তাক বানানো যেতে পারে। প্রথমে মাটি হতে এক ফুট উপরে একটি মাঁচা বানাতে হবে। এক মাঁচা থেকে আরেক মাঁচার দুরুত্ব আড়াই থেকে তিন ফুট হলে সংরক্ষণ পরবর্তী বাছাই ও অন্যান্য কাজ সহজতর হয়।

সর্ব্বোচ্চ মাঁচা ছাদ থেকে তিন থেকে পাঁচ ফুট নীচে থাকলে ভালো হয়। নইলে ছাদের তাপে আলুর ক্ষতি হতে পারে। মাঁচা তৈরির পর তাতে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পুরু করে আলু রাখা যেতে পারে। আলু সংরক্ষণের জন্য ঘরের জানালা চওড়া বড় হলে ভালো হয়।

নতুন ঘরটির চাল অব্যশই ছনের তৈরি হতে হবে যেন ভেতরটা বেশ ঠাণ্ডা থাকে। আলু সংরক্ষণের আগে ভালোভাবে বাঁছাই করে কাটা, পাচা, দাগি বা পোকাক্রান্ত আলু সরিয়ে ফেলতে হবে ।

গাছের নীচে গুদাম করলে ভালো হয়। গুদামঘরে উপর বড় গাছ না থাকলে লাউ কুমড়া সীম জাতীয় গাছ লাগিয়ে গুদাম ঘরের ছাদের ওপর ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। আর যদি পকুরের পাড়ের হয় তবে তাতে সহজেই এবং সবসময় বায়ু চলাচল করতে পারে যেন তা খেয়াল রাখতে হবে।

পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এভাবে যদি আলু রাখা হয় তবে একটি ১০ ফুট বা ১২ ফুট আকারের ঘরে প্রতি মাঁচা বা তাকে দুই হাজার কেজি করে আলু রাখা সম্ভব। এবং এরকম একটি ঘরে বাড়তি কোনো খরচ ছাড়াই তিন বছর আলু সংরক্ষণ সম্ভব।

তিন বছর পরে শুধু ঘরের চাল ও মাঁচা মেরামত করলেই আবার দুই থেকে এক বছর আলু রাখা সম্ভব। তবে ঘর তৈরির সময়ে খুটিগুলো সিমেন্টের দ্বারা তৈরি করা হয় তাহলে ঘরের স্থায়ীত্ব বেশি হয়।

সর্তকতা: সংরক্ষিত আলু যেহেতু সরাসরি খাবার আলু হিসেবে ব্যবহুত হবে সেজন্য সংরক্ষনের সময়ে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা ঠিক হবে না বা সংরক্ষণের আগে কোনো কীনাশকে চোবানো যাবে না।