এগ্রিকেয়ার প্রতিবেদক: নিরাপদ সবজি উৎপাদন জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, বর্তমানে সবজি চাষে ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটাচ্ছে। আমাদের কৃষকদের এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিরাপদ সবজি উৎপাদন জোরদার করতে হবে।

আজ (১৪ জানুয়ারি) রোববার রাজধানীতে শুরু হওয়া ‘জাতীয় সবজি মেলা ২০১৮’এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনদিনব্যাপী ‘সারা বছর সবজি চাষে, পুষ্টি-স্বাস্থ্য-অর্থ আসে’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চত্বরে এ মেলা শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, এক সময় শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট মৌসুমে কিছু সবজি পাওয়া যেত। এখন সারা বছর সবজি চাষ হচ্ছে এবং বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া শহর অঞ্চলে ছাদে বাগান এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যা বায়ুমন্ডলকে বিশুদ্ধ করে তোলে। এখানে আমাদের নারীদের অংশগ্রহন বাড়াতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, হাইব্রিডের কারণে এখন আমরা সারা বছর সবজি পাচ্ছি। যা আগে কখনো আমরা ভাবতে পারতাম না। হাইব্রিডের প্রচলন সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিলো। সেময় অনেকে সমালোচনা করেছিলো। হাইব্রিড বীজ নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানীর কাছে জিম্মি হয়ে যাবো। আমাদের কৃষকরা কারো কাছে এখনো জিম্মি হয় নাই। দেশী কোম্পানী ও বহুজাতিক কোম্পানীর মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। এখানে কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

কৃষি মন্ত্রী বলেন, আলু থেকে তৈরী স্টার্চ আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকি। আমাদের দেশে আলু থেকে কিভাবে স্টার্চ তৈরী করা যায়, গবেষণার মাধ্যমে ভ্যারাইটাল ইমপ্রুভমেন্টের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ গার্মেন্টস শিল্পে স্টার্চের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তিনি বলেন, কাঁচা কাঠালকে ভেজিটেবল মিট হিসেবে ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কাঁচা কাঁঠালকে বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে আমরা অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো। এজন্য আমাদের প্রচারণা বাড়াতে হবে।

এসময় তিনি উল্লেখ করেন, ভাসমান সবজি চাষে আমরা বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছি এবং এটা দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করছে। শুন্যে, জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে উদ্যান তৈরী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

আয়োজকরা জানান, মেলা উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে নয় টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে কেআইবি চত্বরে শেষ হয়। সকাল ৯:৪৫ টায় কেআইবি অডিটরিয়ামে ‘পরিবর্তিত জলবায়ুতে পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচনে বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি চাষ’বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মো. হারুনর রশীদ। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবুল কাসেম ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ব বিভাগের প্রফেসর মো. রুহুল আমীন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল আজিজ। আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্।

সবজি মেলায় এবার প্রায় ১০৪ ধরনের সবজি প্রদর্শিত হচ্ছে।  এতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ৫৬ টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ টি স্টল ও ৪টি প্যাভেলিয়ন রয়েছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। তৃতীয়বারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হরেক রকমের সবজি দেখার পাশাপাশি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা।

 

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮