নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, করোনার কারণে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে হলে খাদ্য উৎপাদন আরও অনেক বাড়াতে হবে। দেশে খাদ্য উৎপাদনে যে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে এবং উৎপাদনের যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি চলমান রয়েছে সেখানে থেমে গেলে হবে না। সেজন্য তা আরও বেগবান ও ত্বরান্বিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আউশ ও আমনের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে ।

মন্ত্রী আরোও বলেন, ইতোমধ্যে আউশের জন্য বীজ, সার, সেচসহ বিভিন্ন প্রণোদনা কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আগামীর ফসল আমন ও রবি মৌসুমে বীজ, সার, সেচ প্রভৃতিতে যাতে কোন সমস্যা না হয়, সংকট তৈরি না হয় সেজন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে। কৃষিমন্ত্রী সোমবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে আমন ও রবি শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সংস্থাপ্রধানদের সাথে অনলাইন (জুম প্ল্যাটফর্মে) সভায় এ কথা বলেন।

মহামারি করোনার করাল গ্রাসে আজ পুরো পৃথিবী বিপর্যদুস্ত। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে কোন কোন দেশে খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষও হতে পারে। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ও অন্যান্য ভিডিও কনফারেন্সে বার বার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা নয়, তা আরও বেগবান ও ত্বরান্বিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করছে। যাতে করে দেশে খাদ্যের কোন ঘাটতি না হয়, দুর্ভিক্ষ না হয়। বরং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের সম্ভাব্য খাদ্য সংকটে আর্তমানবতার সেবায় বাংলাদেশ যাতে তার উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য নিয়ে সহযোগিতা করতে পারে।

আমন আবাদের এরিয়া বাড়ানোর সুযোগ খুব একটা নেই । তবে, উন্নতমানের জাত ও মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত বীজ সরবরাহ এবং গবেষণা পর্যায়ে বিভিন্ন জাতের ঘোষিত হেক্টর প্রতি ফলন ও কৃষকের মাঠে উৎপাদিত হেক্টর প্রতি ফলনের পার্থক্য কমিয়ে এনে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। পাশাপাশি, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে বছরে একটি মাত্র ফসল হয় সেখানে কিভাবে সারা বছর বিভিন্ন ফসল ফলানো যায়, এসব বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সভায় জানানো হয়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে আমন আবাদের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫৯ লাখ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৫৪ লাখ টন চাল। আমন উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কম ফলনশীল জাতের আবাদ কমিয়ে আধুনিক/উফশি জাতের সম্প্রসারণ ও হাইব্রিড জাতের এলাকা বৃদ্ধি করা হবে। উন্নত জাতের জাত, মানসম্পন্ন বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ, সুষম সারের নিশ্চয়তা, পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা, সেচ খরচ হ্রাসকরণসহ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রবি ফসল (গম, আলু, মিষ্টি আলু, শীতকালীন ভূট্টা, ডাল জাতীয় ফসল, তেল বীজ জাতীয় ফসল, মসলা ও সবজির) লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।

সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে শিরোনামে সংবাদের তথ্য নিশ্চিত করেছেন মো: কামরুল ইসলাম ভূইয়া তথ্য অফিসার, কৃষি মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মোঃ মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবষেণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোঃ শাহ আলম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. এম. সাহাব উদ্দিনসহ অন্যান্য সংস্থাপ্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।