সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে

কৃষিবিদ আতাউর রহমান শরীফ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা সম্ভব, কৃষিমন্ত্রী বরাবর খোলাচিঠি টিতে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি।

মাননীয় কৃষিমন্ত্রী,

আপনি বলেছেন, দেশের কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার নাকি উপায় নেই, কৃষক নাকি খুঁজে পাচ্ছেন না! ব্যার্থতার অভিযোগ করছি আপনার বিরুদ্ধে, সেটা যে অযৌক্তিক না এবং সহজেই সমাধান সম্ভব কীভাবে তা বলছি।

এটা নির্ভর করে আপনার ইচ্ছের উপর। আপনি জনগনের জন্য দৃষ্টান্তমূলক জনবান্ধব কিছু করে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন না চিরকাল সমালোচিত হয়ে থাকবেন।

একজন কৃষিবিদ ও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী হিসেবে চাই আপনার মন্ত্রনালয়েও বর্তমান সরকারের সফলতা অব্যাহত থাকুক ও বিতর্কিত কোন সিদ্ধান্তে যেন সরকারের জনসমর্থন না কমে।



এবার বলি সরকারের সদিচ্ছা থাকলে কীভাবে সারা দেশের কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা সম্ভব।

আরও পড়ুন: এমন যদি হতো… প্রগাঢ় হতো কৃষকের হাসি

নিজে কৃষিবিদ ও কৃষি সংশ্লিষ্ট পেশায় জড়িত আছি বলে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মতামত দিচ্ছি:

আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে ২০০৯ সাল থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে সরকারী সহায়তা সরাসরি কৃষকদের কাছে পৌছানোর জন্য প্রায় ১ কোটি ৮২ লক্ষ কৃষি কার্ড বিতরণ করে। তাই কৃষক সনাক্তকরণ খুব সহজ।

এছাড়া দেশের ৪৮২ টি উপজেলায় কৃষি অফিস রয়েছে। প্রতিটি উপজেলার কৃষি অফিসে মাঠ পর্যায়ে প্রতি ইউনিয়নে ৩ টি ব্লকে ৩ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন।

মানে ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের প্রতি ৩ ওয়ার্ড নিয়ে ১ টি ব্লক। কিছু ব্লকে কর্মকর্তা নেই তবে বিকল্প একজন কাজ চালাচ্ছেন। প্রতি কৃষি ব্লকে ৩ ওয়ার্ডের ৩ জন ইউপি সদস্য ও ১ জন নারী সদস্য রয়েছেন। এরা তার এলাকার প্রকৃত কৃষকদের সবাইকে খুব ভালো করে চিনে। তাই কৃষক চিহ্নিতকরণ ও তালিকাকরণ খুব সহজ।

এর পাশাপাশি সরকারের উপজেলা প্রশাসন, খাদ্য অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে এদের সাহায্য করার জন্য।

# প্রত্যেক ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুসারে ৩ ব্লকে ৩ টি বাজার নির্ধারিত করতে হবে যার তদারকি করবে ঐ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। পাশাপাশি ৩ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ১ জন নারী সদস্য ও দফাদার রয়েছেন।

# এই নির্দিষ্ট বাজারে কার্ড দেখে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও সাহায্য করবে ইউনিয়ন পরিষদ। এভাবে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে ধান ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সংগ্রহ করে গুদামজাত করবে।

# কৃষি কার্ড না থাকলে এবছর দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভেরিফাই করবেন সে প্রকৃত কৃষক কিনা যেহেতু এখন কার্ড করা সম্ভব না। পরবর্তী বছর থেকে প্রকৃত কৃষকদের অবশ্যই কার্ড করতে হবে। নাহলে সে সরকারী সুবিধা বঞ্চিত হবে এই ঘোষণা দিতে হবে।

শুরু করলে সমাধান হবে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। কিন্তু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের স্বার্থের জন্য কৃষকদের পক্ষে কাজ না করে শুধু আশ্বাস দিলে কাজের কাজ কিছু হবে না।

এতে দেশের কৃষিখাত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। ফলশ্রুতিতে সরকারের প্রতি জনরোষ বাড়বেই যা থামাতে পারবেন না। তাই সময় থাকতে কৃষিবান্ধব সিদ্ধান্ত নিয়ে কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাবেন এই আশা করি।

সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা সম্ভব, কৃষিমন্ত্রী বরাবর খোলাচিঠি টির লেখক: কৃষিবিদ আতাউর রহমান শরীফ, কৃষি সপ্তম ব্যাচ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।