নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সরিষা চাষ করার পর আলু চাষে আলুর বাদামি পচা রোগ প্রতিকার করা যায় এমনই গবেষণায় সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রশিদুল ইসলাম। আলুর বাদামি পচা রোগ প্রতিকারের কৌশল জানিয়েছেন গবেষক।

বাংলাদেশে আলু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সবজি। তরকারিতে অন্যান্য সবজির সহায়ক সবজি হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহার হয় আলু। বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছরই আলু রফতানি করা হয় বিদেশে। দেশের আলু রাশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, হংকং, ভিয়েতনামসহ বিভিন্নে দেশে রফতানি হয়।

রাশিয়া ২০১৫ সালে আলুর বাদামি পচা রোগের কারণে আলু আমদানি বন্ধ করে দেয়। এসবের কারণ মূলত আলুর Ralstonia solanacearum রোগ। এটি আলুতে বাদামি পচা রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগে আক্রান্ত ফসল কোন দেশ আমদানি করে না। এর ফলে একদিকে যেমন ফলন কমে যাচ্ছে অন্যদিকে বিদেশে রফতানিও ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রশিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন কৃষিবিদ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন। গবেষণার বিষয় আলুর বাদামি পচা রোগ সমস্যা সমাধান। ২০১৬ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের অর্থায়নে ৩ বছরের এই গবেষণায় Ralstonia solanacearum রোগের সহজ প্রতিকার উদ্ভাবন করেছেন বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

কথা হয় কৃষিবিদ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনের সাথে। তিনি জানান, আলুর বাদামি পচা রোগ বিষয়ে ১৩টি জেলায় জরিপ চালিয়েছেন গবেষকরা। মাটিসহ অন্যান্য উপাদান পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন সম্ভাব্য উপায় নিয়ে গবেষণা সফলতা পান তারা।

গবেষকদের মধ্যে একজন হলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রশিদুল ইসলাম। তিনি বলেন,  “আলুর বাদামি পচা রোগ প্রতিকারের গবেষণায় দেখেছি আলুখেতে আলু চাষ করার আগে সরিষা ফসল লাগিয়ে কিছু দিন রেখে দিয়ে বায়োফিউমিগেশন, ট্রাইকোডার্মা ভিত্তিক বায়োডার্মা এবং কেঁচো সার দিয়ে মাটিশোধন করে এই জীবাণুর সুপ্ত সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব।”

আমরা বেশ কয়েক বার দেশের বিভিন্ন এলাকায় উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিতে চাষ করে দেখেছি আলুর Ralstonia solanacearum রোগ হয়নি। তাই আমরা বলছি চাষিরা এই পদ্ধতি গ্রহণ করলে রোগ থেকে মুক্তি পাবে। এর ফলে রফতানিযোগ্য কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব। যার দ্বারা আলু রফতানির নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব। শিগগিরই এই পদ্ধতি কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এ গবেষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে ৮৯.৫ লাখ টন। সেটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১০৯ লাখ টন। বর্তমানে দেশে আলুর চাহিদা রয়েছে ৬০ লাখ টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১ লাখ টনের বেশি আলু বিদেশে রফতানি করে, যার মধ্যে সিংহভাগ আলু রফতানি হয় রাশিয়াতে। টন প্রতি ২৫০ ডলার করে দাম পাওয়ায় রফতানি আয় হয় ২১৮ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ প্রায় ৬৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১ লাখ ৩ হাজার টন থেকে ৩২ হাজার টনে নেমে আসে। এ সময় আসে মাত্র ৬৭ কোটি টাকা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ