ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতের রেস এখনো কাটে নি সাতক্ষারা জেলার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় বাস করা মানুষদের। নদীর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধে কয়ক্ষতি হওয়ায় বাঁধ সংলগ্ন এলাকাবাসীরা উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন।

এ দুই উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাত ও প্রবল জোয়াররে উত্তাল ঢেউয়ে দূর্বল উপকূল রক্ষা বাঁধের ৭টি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে উপকূল রক্ষা বাঁধরে কয়েক ফুট। এতে ওই এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন র্বোডরে (পাউবো) শ্যামনগর এলাকায় দায়িত্বরত র্কমর্কতারা মঙ্গলবার বিকালে (২৫ অক্টোবর) সরজেমনি বাঁধরে ধসে যাওয়া অংশ পরির্দশন করেছেন। এ সময় তারা দ্রুত বাঁধ মেরামতের কথা বলেছেন এলাকাবাসীকে।

এদিকে, সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিত্রাংয়রে প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল ঢেউয়রে আঘাতে শ্যামনগর উপজলোর গাবুরা ইউনয়িনরে হরশিখালী, নাপিতখালী এবং বড় গাবুরা এলাকার বাঁধ ধ্বসে গেছে। এসব এলাকার বাঁধের ওপর দিয়ে নির্মিত ইটের সোলিং সড়কওে বেশির ভাগ অংশ খোলপটেুয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সীমান্তর্বতী কৈখালী ইউনিয়নের নৈকাটি, বিজিবি ক্যাম্পসহ আদম আলীর বাড়ি সংলগ্ন অংশে প্রায় ২০০ মিটার বাঁধে ধ্বস দেখা দিয়েছে। জোয়ারের পাশাপাশি ঢেউয়ের তীব্রতায় সোমবার বাঁধের এসব অংশ পাশের কালিন্দি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

শ্যামনগর উপজেলা কর্মরত একাধিক গণমাধ্যমকর্মী জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়রে প্রভাবে উপকূলীয় শ্যামনগর উপজলোর দ্বীপ ইউনয়িন গাবুরাকে ঘিরে থাকা বাঁধের অন্তত ৭টি অংশ নদীতে ধ্বসে গেছে। পানি উন্নয়ন র্বোডরে র্কমর্কতারা মঙ্গলবার ১৫নং পোল্ডাররে বিভন্নি অংশ পরির্দশন করে ধ্বসে যাওয়া এসব জায়গাগুলো চিহ্নিত করেন।

দুইদিনের টানা বৃষ্টির পাশাপাশি সোমবার সকালে েেজায়াররে তীবৃতা বৃদ্ধিসহ ঝড়ো বাতাসে সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরার চারপাশের  বেড়িবাঁধে ধ্বস নেমেছে। সিত্রাং পরর্বতী বাঁধের পরিস্থিতি পর্যবক্ষণে যেয়ে বাঁধের এসব চিত্র দেখে এসেছেনে গণমানধকর্মীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে শ্যামনগরর উপজেলার কোথাও বাঁধ না ভাঙলেও গাবুরার ৭টি পয়েন্টে ধ্বস নেমেছে। বড় গাবুরাসহ নাপিতখালী, জেলেখালী, নেবুবুিনয়া এলাকার ধ্বস ভয়ংকর পর্যায়ে পৌছেছে এমনটাই দাবি তাদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো শ্যামনগর অংশের সেকশন অফিসার সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, চারপাশে নদী বেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা বঙ্গোপসাগর তীরর্বতী লোকালয়। জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড় বা যে কোনো দূর্যোগ সবসময় গাবুরাকে আঘাত করে। গাবুরার চারপাশ ঘিরে থাকা বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার জায়গাজুড়ে (৭টি পয়েন্টে) নদীতে ধ্বসে যাওয়ার বিষয়টি তারা নিশ্চতি হয়েছেন। বিষয়টি র্উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রকল্প বরাদ্দ মোতাবকে দ্রুত এসব ধ্বসে যাওয়া অংশ মেরামতের কাজ শুরু হবে।

এদিকে, সরজমিনে আশাশুনি উপজেলার চুইবাড়য়িা ঘুরে দেখা গেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে কমপক্ষে ১০টি পয়ন্টে নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রতাপনগর ইউনয়িনের কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাধে বেড়িবাঁেরে ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে। উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়ায় শ্রীপুর এলাকার বাঁধটি আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।

আরও পড়ুন: নামলো সতর্কতা সংকেত, ৬ অঞ্চলে বৃষ্টির পূর্বাভাস

সিত্রাংয়রে প্রভাবে কপোতাক্ষ নদের ১০-১২ ফুট চওড়া বাঁধটি ভেঙে এখন মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট অবশিষ্ট রয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনয়িনরে ছয়টি গ্রামের গ্রামের ঘরবাড়ি, ফসল ও মাছের ঘের প্লাবিত হবে। ইতোমধ্যে ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০০ মিটার কাজ মাত্র দুই মাস আগে যেনতেন উপায়ে সংস্কার সমাপ্ত করে।

অন্যাদেক বাঁধটি যথাযথভাবে সংস্কার করার জন্য পাউবোকে একাধকিবার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতাপনগর ইউনয়িন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ গাজী। তিনি বলনে, সংস্কার না করায় বাঁধটি ভাঙতে ভাঙতে মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট রয়েছে। যেকোনো সময় নদের জোয়ারে বাঁধটি ভেঙে একাধিক গ্রাম তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

আশাশুনি উপজেলা উপকূলবর্তী কয়েকজন জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আশাশুনির কপোতাক্ষ নদ ও খোলপটেুয়া নদীর বিছট, কাকবাশয়িার দুটি পয়ন্টে, খাজরা ইউনয়িন পরিষদের সামনে, মনিপুর, দক্ষিণ একসরা, রুইয়ার বিল, শ্রীপুর, হরষিখালী, থানাঘাটা, বলাবাড়য়িার দূর্গাপুর স্কুলের সামনে, কুড়িকাউনিয়া স্লুইস গেটে এবং বড়দল ইউনিয়নের কয়ারগাতি এলাকার বেড়িবাঁধ নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন র্বোড (বিভাগ-২) এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির জানান, জিয়াউল ইসলাম নামের একজন ঠিকাদার দুই মাস আগে শ্রীপুরে কাজটি করছেনে। কিন্তু কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ করেননি। আগামী ডিসম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। বর্তমানে বাঁধের অবস্থা নাজুক। ঠিকাদারকে বুধবার (আজ) শুরু করে দ্রুত সময়ে শেষে করার জন্যা বলা হয়েছে।