সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: সাশ্রয়ীমূল্যে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস নিশ্চিতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। নইলে খাদ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

আজ বুধবার মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। বক্তারা জানান, সয়াবিন মিল রপ্তানী বন্ধ না হলে মৎস্য ও  প্রাণিসম্পদে যুক্ত খাদ্যের দাম বেড়ে যাবে। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের একটি হোটেলে অনুষ্ঠানটির আয়োজনে ছিল ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে হাঁস-মুরগি, মৎস্য ও গবাদিপশুর খাদ্য তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ ‘সয়াবিন মিল’ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে খামারি ও উদ্যোক্তাদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।

পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিখাদ্য তৈরিতে প্রধান যে কাঁচামালগুলো ব্যবহার হয় তার মধ্যে ভুট্টা, সয়াবিন মিল, গম, আটা, ময়দা, ভাঙা চাউল, চাউলের কুড়া, ফিশ মিল, সরিষার খৈল, তৈল, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি অন্যতম। এর মধ্যে দুটি উপকরণ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় তা হলো ভুট্টা ও সয়াবিন মিল।

বর্তমানে চাহিদার ‘সয়াবিন মিল’ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। আমাদের দেশে ‘সয়াবিন মিল’ এর মোট চাহিদা বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদকারি প্রতিষ্ঠান হতে এবং অবশিষ্ট ২০ থেকে ২৫ ভাগ আমদানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।

সয়াবিন মিলের রপ্তানির সিদ্ধান্তে খামারিরা উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ডিম, মাছ, মুরগি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচই হয় ফিড কেনা বাবদ। তাই ফিডের দাম বাড়লে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। অন্যদিকে খরচের বিপরীতে পণ্যের নায্য দাম না পাওয়ায় বড় অংকের লোকসানের মুখে পড়তে হবে খামারিদের।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, দেশের মানুষের স্বার্থে শূণ্য শুল্ক সুবিধায় আনা সেই সয়াবিন সীড থেকে উৎপাদিত সয়াবিন মিলই এখন ৩ থেকে ৪টি সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান মুনাফার স্বার্থে রপ্তানি করছে। অতীতে কখনও ভারতে সয়াবিন সীড কিংবা সয়াবিন মিল রপ্তানি হয় নি বরং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমান সয়াবিন মিল আমদানি করা হয়ে থাকে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন মিল আমদানি করতে হলে এলসি করা থেকে শুরু করে বন্দরে মাল এসে পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৫০ দিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সময় লাগে ৭০ দিন। ভারত থেকে সড়কে ৭ থেকে ১০ দিন, কনটেইনারে ১৫ থেকে ২০ দিন।

গণমাধ্যমে “সয়াবিন মিল রপ্তানি রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার” এমন খবরে স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন মিলের দাম কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা বৃদ্ধি করেছে। সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

এ অবস্থায় সয়াবিন মিল রপ্তানী বন্ধ ঘোষণা দ্রুত দেয়া দরকার। নইলে দেশের পোল্ট্রি, মৎস্যসহ প্রাণিসম্পদ খাতে খাদ্য দাম বেড়ে যাবে। খামারিরা বড় ধরণের লোকসানে পরবে।

মিট দ্যা প্রেসে জানানো হয়, বাংলাদেশ হতে নেপাল ও ভারতে সয়াবিন মিল রপ্তানি শুরুর সাথে সাথে আমরা বাণিজ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে অবিলম্বে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের জন্য আবেদন জানাই।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় হতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের সুস্পষ্ট মতামতসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি প্রদান করলে এগুলোর কোন কিছুই আমলে না নিয়ে একতরফা ভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানির সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছে এবং ভারত ও নেপালে সয়াবিন মিলের রপ্তানি চালু রয়েছে। শুধু তাই নয়, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সয়াবিন মিল বন্ধের আদেশ প্রদান করলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের কারণে তা পুনরায় প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বাণিজ্য উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও নিজের দেশের স্বার্থ, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার স্বার্থে অনেক দেশই আমদানিযোগ্য বিভিন্ন পণ্যের ওপর নানা ধরনের কর ও শুল্ক আরোপ করার মাধ্যমে আমদানি নিরুৎসাহিত করে থাকে।

এমনকি অনেক সময় রপ্তানিও বন্ধ করে দেয়। ভারতেও অভ্যন্তরীণ সংকট ও মূল্য বৃদ্ধি হলে চাউল, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া হয়; অথচ আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অন্য দেশের শিল্পের স্বার্থে রপ্তানি উন্মুক্ত করে দিয়ে কার্যত দেশীয় ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ও ফিড উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ এর দাবি জানিয়ে মিট দ্যা প্রেসে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান, সাধারন সম্পাদক মোঃ আহসানুজ্জামান, সদস্য, মসিউর রহমান, আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান, সাইফুল আলম খান, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদসহ অনেকে।