নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪কম: কয়েক মাস ধরেই রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বেশ ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার, সোনালীসহ সব ধরণের মুরগি। তবে, হটাৎ মুরগির দাম কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে পোল্ট্রি খাত সংশ্লিষ্টরা।

মুরগির দাম কমতে পারে কিনা জানতে রাজশাহীর সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া এলাকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মিলন হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মুরগির দাম বাড়বে বলে মনে হয় না। বরং কমতে পারে। এবার শীত কম হয়েছে অনেক আগেই। ফলে খামারিরা নতুন করে বাচ্চা তুলতে শুরু করেছে। আমাদের কাছে মুরগির আমদানি ভালো। বাজারে মুরগির যা দাম আছে তাতে কিছুটা কমতে পারে। আবার নাও কমতে পারে; বলা যায় না পোল্ট্রি সেক্টরের কথা! হটাৎ আমদানি বেড়ে গেলে দাম কমে যায়। আবার বাজার টান পড়লে দাম বাড়ে। এটা নিশ্চিত খামারিরা কিছুটা লাভ পেয়েছে। বর্তমান দাম থাকলে তারা ভালো থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।

কথা হয় পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, কঠিন শীতের সময় মুরগির রোগ-বালাই বেশি হয় । এবার শীত জলদি চলে যাবেই বলে মনে হচ্ছে। কিছু কিছু বড় খামারিরা বাচ্চা তুলছে। তাদের কয়েক চালান বিক্রি হয়েছে। আরোও আছে। মূলত, প্রান্তিক হাজার-দু-হাজার মুরগির খামারিরা ধ্বংশ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে যেসব মুরগি ও ডিমের উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারে আসলে দাম কমার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, ১৫ থেকে ২০ দিন পর।

খাদ্যের দামে উৎপাদিত মুরগির দাম তুলনামূলক ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে যেখানে সারাবিশ্ব কৃষি-প্রাণিসম্পদ রক্ষায় নেমে এসেছে; সেখানে আমাদের দেশের সিন্ডিকেট সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪-৫ দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ২৫’শ টাকা। সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। খামারি মরলে তাদের কি?

পড়তে পারেন: সপ্তহের ব্যবধানে ডিম-মুরগিসহ দাম বেড়েছে ১৪ পণ্যের

দাম বাড়নো প্রয়োজন আছে কিনা? এমন প্রশ্নে পাইকারি মুরগি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মুরগির দাম বাড়ছে আবার কমছে। ব্রয়লারের কেজি সর্বনিন্ম ১৬০ টাকা রাখা দরকার। তাহলে আমাদের দেশের খামারিরা লাভবান হতে পারবে। ব্রয়লার মুরগির দাম সবচেয়ে বেশি উঠানামা হয়েছে। এরআগে সচরাচর ব্রয়লারের কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে আবার ১০ টাকা কমে যায়।

এই ব্যবসায়ী জানান, বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, সোনালী ২৩০ টাকা, লাল লেয়ার ২২০ টাকা, সাদা লেয়ার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। কাঁচাবাজারের ঠিক নাই। মাল (ডিম) একটু টান পড়লে দাম বাড়ে আবার ক্রেতা কমে গেলে বা চাহিদা না থাকলে দাম কমে যায়। প্রতিহালি (৪টি) লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকায়। সাদা ডিম ৩২ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪৮ টাকা হালি দরে বিক্রি করছেন। যা জানতে পারছি আমাদের ডিলারের কাছে-তাতে দাম কমতে পারে।

মুরগির দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীতে করোনায় ৬০ ভাগ খামার বন্ধ ছিল। নতুন করে ২০ শতাংশ খামারি আবার উৎপাদনে নেমেছেন। শীতে বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মুরগি মারা গেছে। ভয়ে আর নতুন বাচ্চা অনেকে তোলেননি, তাই দাম বেড়েছে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খামারি উৎপাদনে আসলে এবং বাইরের জেলা থেকে আমদানি শুরু হলে দাম কমে যাবে। যাদের মুরগির বিক্রির উপযোগী হয়েছে তারা ছেড়ে দিতে পারেন।

ডিমের দাম বাড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিমের দাম এবার ৩৬ টাকা হালিতে বিক্রি হয়েছে। খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে অনেক লেয়ার খামারি মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন।

খাদ্যের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে আদর্শ পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের মালিক এএইচএম আরিফুজ্জামান বলেন, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে খামার বন্ধ হয়ে গেছে। খামার বন্ধে আমাদের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। কোনমতে টিকে আছি। খামারিদের দিকে যদি এখনই সরকার না তাকায় তাহলে পোল্ট্রি খাত ধ্বংশের মুখে চলে যাবে। অনেক খামারি বাড়ি-ভিটা বিক্রি করে ব্যবসার ঋণ শোধ করছেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ