মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর: হলুদে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। সরিষা চাষের পর থেকেই এই ফুলের সমারোহ। এই হলুদের অর্থ অর্থ্যাৎ সরিষার ভালো দামের স্বপ্নে বিভোর হয়ে রয়েছেন যশোরাঞ্চলের কৃষকরা। তারা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে সরিষার ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। এবারও ভালো দাম পাবেন তারা।

দক্ষিণের জেলা ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় বেড়েছে সরিষা চাষ। চলতি বছর এ অঞ্চলে আশাতীতভাবে সরিষা চাষ বেড়েছে। আবহাাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষা চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ প্রণোদনা, ন্যায্য মূল্য আর ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সরিষার চাষ বড়েছে।

এবার অনুকূল পরিবেশ থাকলে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট অফিস বাম্পার ফলনের আশা করছেন। দেশের ঋতু পরিক্রমায় হেমন্ত ও শীত ঋতুতে মাঠে মাঠে এই সরিষার চাষ হয় থাকে। এ অঞ্চলে চাষ হওয়া সরিষা দেশের মোট চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণে ভূমিকা রাখে।

এ অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ সরিষা ফুলের অপূর্ব হলুদ শোভার চোখ জুড়ানো দৃশ্য আর মন মাতানো গন্ধে প্রকৃতির সৌন্দর্য যেমন বাড়িয়ে দিয়েছে। ঠিক তেমনি অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার হলুদ স্বপ্নে বিভোর এ অঞ্চলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের জেলাগুলোতে মোট ৭২ হাজার ৯২৫ হেক্টর সরিষা চাষ হয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৪ হাজার ৯০ হেক্টর।

এ বছর ১৮ হাজার ৩৩৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত মৌসুমে এসব জেলায় মোট সরিষা চাষ হয়েছিল ৪৯ হাজার ৮৬১ হেক্টর। ওই বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৩ হাজার ৭৩৫ হেক্টর। প্রতিকূল আবওয়ার জন্য গত কয়েক বছর চাষ কম হয়েছিল বলেও জানান তারা।

কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকারের বিশেষ প্রণোদনার কারণে এ বছর সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন তেলের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে, অন্যদিকে জমিতে জৈব সারের ঘাটতি পূরণে বিশাল ভূমিকা রাখবে এ সরিষা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে যশোর জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১৩ হাজার হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ২৪ হাজার ৮৪৮ হেক্টর, ঝিনাইদহে ৯ হাজার ৭৭০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১১ হাজার ১১২ হেক্টর, মাগুরায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে, কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ১৫০ হেক্টর; চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে, চুয়াডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮০০ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর এবং মেহেরপুরে ৪ হাজার ৩৭০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে।

সর্বশেষ গেল ২০২১-২২ মৌসুমে যশোর জেলায় ১১ হাজার ৯২৬ হেক্টর, ঝিনাইদহে ৯ হাজার ১১৯ হেক্টর, মাগুরায় ১৩ হাজার ৩৯ হেক্টর, কুষ্টিয়ায় ৯ হাজার ১৪৭ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ২৬৫ হেক্টর এবং মেহেরপুরে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাঁঠালিয়া গ্রামের কৃষক স্কুল শিক্ষক শফিকুর রহমান জানান, চলতি বছর দু’বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে মাত্র দেড় হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৪০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবো। কয়েক বছর যাবত সরিষার দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে তেলের দামও। তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সরিষা একটি ভালো চাষ বলেও উল্লেখ করেন এই কৃষক।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, সরকারের লক্ষ্য আগামী তিন বছরে ৪০ শতাংশ সরিষার চাষ ও বাড়াতে হবে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজর কোটি টাকার তেল আমদানি করতে হয়। এ সব ঘাটতি পূরণে উৎপাদন যেন স্থানীয়ভাবে করতে পারি সে লক্ষ্যে গত বছরের জুলাই থেকে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার প্রনোদনা কর্মসূচি চালু করেছে। যশোর অঞ্চলের ৬ জেলার ১ লাখ ৪০ হাাজার কৃষককে বিঘা প্রতি বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বারি সরিষার বীজ দেওয়া হয়েছে যা মাত্র ৭৫ দিনের মধ্যে ফলন সম্ভব হয়। যা বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মণ ফলন হচ্ছে।

সরকারের এ কর্মসূচির কারণে কৃষকরা ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হয়েছে। ফলে সরিষা চাষ এখন এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাছাড়া সম্প্রতি ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা সরিষার চাষ বৃদ্ধি আরো একটি অন্যতম কারণ বলে যোগ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ