নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে আগামী জুন মাসে রংপুর আঞ্চলের বিখ্যাত ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ আম বাজারে আসা শুরু হবে। এবছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার আম বাণিজ্য হবে বলে আশা করছেন সেখানকার চাষিরা।

আগামী দু সপ্তাহ প্রাকৃতিক কোন ঝঞ্জাট না আসে তাহলে আম বাগানি ও ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান হবেন। আর এ জন্য তারা সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন, পরিবহন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার শুরুর দিকে হাঁড়িভাঙ্গার আমের ফলন ভালো ছিলো। তবে আম বড় হওয়ার সময় দুই দফা শিলা বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সারাদেশে জনপ্রিয়তার তালিকায় থাকা এ আম জুনের ২০ তারিখের পর থেকে পরিপক্ক হওয়ার কথা। তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে বা প্রচণ্ড গরম থাকলে সপ্তাহ খানেক আগেও বাণিজ্যিকভাবে বাজারে হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করতে পারবেন বাগানিরা।’

পড়তে পারেন: রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে এবার রেকর্ড আম উৎপাদনের আশা

গতকাল বুধবার (১৮ মে) মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরাহাট, পদগঞ্জ, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুর, লাগেরহাট, সর্দারপাড়া, রংপুর নগরের বড়বাড়ী, সদর উপজেলার সদ্যপুস্করণী ইউপিরকাটাবাড়ি এলাকার গিয়ে দেখা যায়, শেষ সময়ের বাগান পরিচর্যা করছেন বাগানিরা। বাগানিদের অনেককেই গাছে ভিটামিন স্প্রে করছেন। অবার কেউ কেউ পোকা দমনে স্প্রে করছেন কীটনাশক। এই আমকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন আম বাগানের মালিক ও এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে সব জাতের আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। যা গতবারের তুলনায় পাঁচ হেক্টর বেশি। হাঁড়িভাঙ্গা আমের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে জেলায় ২৯ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। এছাড়া অন্যসব আম মিলিয়ে লক্ষ্য মাত্রা ৪৫ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন।

এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইতোমধ্যে অনেকেই এসেছেন বাগান কেনার জন্য। মৌসুমী আম ব্যবসায়ী কিংবা অনলাইনে যারা কেনাবেচা করেন তারা এসেছেন বাগান দেখার জন্য। অনেকেই বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করছেন দাম দর।

নেয়াখালি থেকে মিঠাপুকুরের আখিরার হাটে বাগান কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গতবারও এসেছিলাম। ভরা মৌসুমে ১৭ দিন অবস্থান করে নোয়াখালীসহ চাঁদপুর, লক্ষীপুর ও কুমিল্লা জেলায় অনলাইনে আম বিক্রি করেছি। এবার করোনার ধাক্কা নেই তাই আগেভাগেই চলে এসেছি সব লাইনঘাট ঠিক করতে। গতবারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার আরও বড় পরিসরে ব্যবসা করার আশা করছি।’

আমকে ঘিরে মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরার হাট, বদরগঞ্জের পদাগঞ্জসহ আশপাশের ছোট বড় বাজারের আম বিক্রির স্থানগুলোকে সংস্কার করে প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। এছাড়াও অনলাইনে আম বাজারের আরও ব্যাপক প্রসার ঘটাতে এসএ পরিবহন, সুন্দবনসহ আরও কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের শাখা অফিসগুলোরও পরিধি বাড়ানোর কাজ করেতেও দেখা গেছে।

পদাগঞ্জ বাজারের সুন্দরবন কুড়িয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার বাবু মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর অনলাইনে আমের চাহিদা বেড়েই চলছে। গতবারের চাহিদার কথা চিন্তা করেই এবারও প্রস্তুতি নিচ্ছি সুন্দর ও নিরাপদে আম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য।’

বিগত কয়েক বছর ধরে রংপুর অঞ্চলকে সমৃদ্ধির দিকে নেওয়া সুস্বাদু, মিষ্টি ও রসালো ফল হাঁড়িভাঙ্গার কদর এখন দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের অন্য স্থানের আম শেষ হবার পরই রংপুরের বাজারে আসবে এ আম।

মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙ্গার চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি থাকবে। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি হাড়িভাঙ্গা আম ৮০ থেকে ১৫০ টাকা হতে পারে। এছাড়াও বড় বড় বাগান মালিকদের সঙ্গে সরাসরি এবং অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও আম কেনা যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাঁড়িভাঙ্গা আম শুধু স্বাদেই নয় রাসায়নিক বিষমুক্ত রাখা এর বৈশিষ্ট। এ বছর ফলন কম হলেও রংপু্র অঞ্চলে প্রায় সাড়ে সাত হাজার হাজার চাষি এবং লক্ষাধিক শ্রমিকের জীবন নির্ভর করে এই বাগানের ওপর।

হাঁড়িভাঙ্গা আমের সম্প্রসারক আব্দুস ছালাম সরকার বলেন, তিনি এবার ১৩ একর জমিতে আমের চাষ করেছেন। গত বছর এই জমি থেকে ২০ লাখ টাকার আম পাইকারি দরে বিক্রি করেছেন। ফলন কিছুটা কম হলেও আমের সাইজ ভালো থাকায় এবারও টার্গেট পূরন হবে তার। আম কোলস্টোরেজ ব্যবস্থায় রাখার জন্য এই অঞ্চলে একটা হিমাগার স্থাপন করাসহ ‘জিআই’ পণ্যে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান এই সফল চাষি।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ মো. শামিমুর রহমান বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে পরিত্যক্ত জমিতে প্রতিবছরেই বাড়ছে আমের চাষ। এবার ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি ১২-১৫ টন আম আসবে। ইতোমধ্যে বিখ্যাত এ আমের বাজারজাতকরণে কৃষি বিভাগ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বড় বড় চাষিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক তৈরির কাজও করছে কৃষি বিভাগ।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ