নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: টাঙ্গাইলে চলতি রবি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ভুট্টায় ছেয়ে গেছে মাঠ। গাছের আগায় খয়েরি ফুলের দেখা। ধরতে শুরু করেছে থোড়। ফলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ভুট্টার।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলায় বিশেষ করে চরাঞ্চল জুড়ে এখন শুধু ভুট্টার উঠতি চারা শোভা পাচ্ছে। ঝিলমিল করে বাতাসে দুলছে ভুট্টার সবুজপাতা। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা অধীর আগ্রহে মনের খুশিতে জমিতে কাজ করছেন।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার নদী বেষ্টিত বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা রবি মৌসুমে গত কয়েক বছর যাবৎ আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চরাঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়। কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গমের পাশাপাশি ভুট্টার ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্টা গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক বিঘা জমিতে ভ্ট্টুা হয় ৪০ থেকে ৪৫ মন। বিঘা প্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারে। চলতি রবি মৌসুমে জমিতে ফলনের আকৃতি ভাল হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তারা এখন ব্যস্ত জমি পরিচর্যায়। অনেক কৃষক ভ্ট্টুার জমিতে সাথী ফসল হিসেবে শীতকালীন শাক-সবজিরও আবাদ করেছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গতবছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৭৬ হেক্টর বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৬ হাজার ৭৫০ কৃষককে ২ কেজি করে মোট ১৩ হাজার ৫০০ কেজি ভুট্টার বীজ দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে। এছাড়াও ২০ কেজি করে ডি.এ.পি সার এবং ১০ কেজি করে এম.ও.পি সার দেয়া হয় বিনামূল্যে। অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বৃহৎ পরিমাণের কৃষক ভুট্টার প্রণোদনা পান এ মৌসুমে।

গত বছর বাজারে ভুট্টার দাম বেশি থাকায় অধিক লাভবান হন কৃষকরা। একারণে প্রণোদনা কর্মসূচির বাইরেও অধিক পারিমাণের কৃষক তাদের জমিতে এ মৌসুমে ভুট্টার আবাদ করেছেন। ভ্ট্টুার আবাদ বৃদ্ধি ও ফলন ভালো করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।

ভুট্টা চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ার আমাদের চরাঞ্চলের ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়। এ বছর আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আশা করছি, বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ফলন পাবো। গত বছর চরাঞ্চলে ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এবছর আরও অধিক জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আমার দেখা-দেখি যারা অন্য ফসল আবাদ করতো তারাও এবছর ভুট্টা চাষ করেছে।

দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগ দেউলী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা বলেন, এবারই প্রথম আমি ভুট্টার আবাদ করেছি। আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় ভুট্টার প্রচুর আবাদ হয়। ভুট্টার ফলনও অনেক হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। আমি ৪০ শতাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আশা করছি ভালো ফলন পাবো।

ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের ভুট্টা চাষি মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এ বছর বন্যায় আমাদের বীজতলা, সবজি ক্ষেতসহ সকল ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হই। আর এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা পরবর্তী সময়ে যমুনার বুকে জেগে উঠা চরে আমরা ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম ও লাভ অনেক বেশি। আশাকরি ভুট্টা চাষ করে বন্যার ক্ষতি অনেকটাই আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো।

দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারহানুল কবির বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন ফসল হিসেবে কৃষক যেন চাষাবাদের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পরে সেজন্য আমরা মাঠে সরসরি কৃষককে সঠিকভাবে ভুট্টা চাষ করার প্রদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। ভুট্টায় বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ করলে সেগুলো দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গতবছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৭৬ হেক্টর বেশি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ