মাহমুদুন্নবী, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: গ্রামের মেঠোপথে কৃষিজ পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার হতো গরুর গাড়ি নামে একপ্রকার যান। গরুর গাড়ি হল দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা একপ্রকার যান। এই যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুতে এই গাড়ি টানা হয়। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। এই হলো গরুর গাড়ি।

শুধু যান হিসেবেই নয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে গরুর গাড়ি। গান, গল্প, কবিতার শেষ নেই। গরুর গাড়ি নিয়ে কন্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া বিখ্যাত গান “আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে- ধুতুর, ধুতুর, ধুতুর ধু সানাই বাজিয়ে, যাব তোমায় শ্বশুরবাড়ি নিয়ে” আজও জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

জানা যায়, পাকা রাস্তা, সভ্যতার মেরুকরণের আগে গ্রামের মেঠোপথে দুই চাকার গরুর গাড়ি দিয়ে ধান, পাট, মানুষসহ নানান জিনিস পরিবহন হতো কিন্তু আধুনিকতার ছোয়ায় বিলুপ্তের পথে দুই চাকার গরুর গাড়ি।

পড়তে পারেন: বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু-ছাগলের চিকিৎসা দিবে ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক

বর্তমানে গরুর গাড়ি শব্দটি বইয়ের পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ। সভ্যতার প্রায় উন্মেষকাল থেকেই বাংলাদেশের সর্বত্রই যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল “গরুর গাড়ি ”। কিন্তু আধুনিকতার সভ্যতার বিবর্তনের যন্ত্রচালিত লাঙল বা পাওয়ার টিলার এবং নানা যন্ত্রযানের উদ্ভবের ফলে বিলুপ্ত গরুর গাড়ি।

মৎস ও শষ্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের নওগাঁ জেলার সর্বত্রই এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহি গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্তের পথে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটেছে। পক্ষান্তরে হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এই ঐতিহ্য। তবে এখনো গরুর গাড়ি টিকে রেখেছে নানারকম লোকসংস্কৃতি ও তাকে ভিত্তি করে নানা মেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

পড়তে পারেন: ঘাস চাষ করেই কোটিপতি গফুর!

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রী:জন্মের ১৫০০-১৬০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর – পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিলো। যা সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাম বাংলায় এই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।

এক সময় উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকায় জনপ্রিয় বাহন ছিলো গরুর গাড়ি। বিশেষ করে এই জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিলো গরুর গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই জনপ্রিয় পল্লী বহন। বর্তমানে নানা ধরণের মটোরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যান বাহনের ব্যবহার কমে আসছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়েনা।

পড়তে পারেন: পাঙ্গাস চাষে কোটিপতি সিঙ্গাপুর ফেরত বেলায়েত

বর্তমান যুগ হচ্ছে আধুনিক যান্ত্রিক যুগ। এখনকার মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহণের জন্য ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লড়ি, নসিমন, করিমনসহ বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য মটোরসাইকেল, রেলগাড়ি, অটোরিকশা মাইক্রোবাস ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়েনা গরুর গাড়ি।

গরুর গাড়ির যানবাহনটি হলো নিরাপদ। এই বহনে অন্যতম সুবিধা হলো জ্বালানীর কোন প্রয়োজন হয়না। জ্বালানী না থাকায় দূর্ষিত ধোয়া তৈরী হয়না ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে তেমন কোন দূর্ঘটনা ঘটার কোন আশংকা থাকেনা। অথচ যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুর গাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে।

পত্নীতলা বাজারের ষাটোর্ধ ফজলুল করিম জানান, শহরের ছেলে মেয়েরা তো দূরের কথা বর্তমানে গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির সাথে তেমন পরিচিত নয়। আবার শহরের অনেক ছেলে মেয়েরা তাদের বাবা মাকে গরুর গাড়ি সম্পর্কে প্রশ্ন করে গরুর গাড়ি কী? এটা দেখতে কেমন? চলে কীভাবে? গরুর গাড়ি দেখলে আসতে হবে বরেন্দ্র অঞ্চলে নওগাঁয়।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ