নিজস্ব  প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারির নাম আলী হোসেন। “গত কা‌লের একাংশ মাত্র। আবার খাবার বাচ্চার যে দাম কেম‌নে খামা‌রি বাচ‌বে? বাচ্চা সি‌পি, খাবার সি‌পি, বয়স ২৯দিন, ওজন ১৬০০। গতকাল ষ্ট্রোক ৭৩পিস।”

এমনই একটি পোস্ট করেছিলেন “আসুন 🐔ব্রয়লার/সোনালী🐔 মুরগি পালন করি👉বেকারমুক্ত👈বাংলাদেশ গড়ি” ফেসবুক গ্রুপে।

পাঠক আজকের আয়োজন আপনাদের নিয়ে। মুরগি মারা যাওয়ায় অভিজ্ঞ খামারি ভাইয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত আলী হোসেনকে পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়াও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও করণীয় বিষয়ে আপনাদের সমস্যা সমাধান জেনে নিন:-

প্রথমে পোস্টটির পাঠক প্রতিক্রিয়া দেখে নিই:

মেহেদী হাসান নামে এক খামারি ব্যঙ্গাত্মক ভাবে বলেছেন,“খামারে মুরগি দিয়ে কি বাড়িতে ঘুমান???নাকি ক্রিকেট খেলতে যান??? গরম বেশি পড়ছে ভালো কথা,,সুন্দর মতো খাবারটা বন্ধ করে,,, বিটেইন দিয়া ফালাই রাখেন,,,,স্টোক করবো না৷৷ , আমরা এসব বিষয় ফেসবুকে পোস্ট দিতে যতোটা উদগ্রীব থাকি,সেটুকু উদগ্রীব ও খামার নিয়ে হই না,,,এ পেশাতে সময়, যত্ন, বুঝ ৩টাই লাগে,,,,,আর ফিড মনে হচ্ছে আর আর পি,,গরম বেশি পড়লেই খাবার বন্ধ, কোন কথা নাই।”

টুটুল দেওয়ান লিখেছেন,আগে মুরগী পালন শিখতে হবে। গরমের সময় মুরগী কম উঠাতে হবে। বেশি গরম পড়লে টিনের চালে পানি দিতে হবে। সি খাওয়াতে হবে এবং ফ্যান দিতে হবে অথবা প্যারাসিট্যামল জাতীয় ঔষধ দিতে হবে খাবার কম দিতে হবে এমন কিছু নিয়ম মেনে চললে ইস্ট্রোক কমবে।”

আহম্মেদ রঞ্জু পরামর্শ ‍দিয়ে লিখেছেন“মুরগির ১৬ দিন বয়স থেকে carva ট্যাবলেট খাওয়ান ১ বড়ি ২ লিটার পানিতে , ইনশাল্লাহ স্ট্রোক হবেনা গ্যারান্টি।”

এবার হিট স্ট্রোকে করণীয় ও সতর্র্কতা বিষয়ে জেনে নিই:

প্রায় অর্ধকোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই এ শিল্পের সুদৃঢ় ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। গরমকাল এ পোল্ট্রি খামারের বিশেষ যত্ন না নিলে কমে যেতে পারে ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি এবং লেয়ার খামারের ডিম সংখ্যা। সে কারণেই নিচের টিপসসমূহ জেনে নিন-

তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও এর প্রভাব
ঘর্মগ্রন্থি না থাকার কারণে মোরগ-মুরগির অতিরিক্ত গরম অসহ্য লাগে। এতে উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত তাপে এদের পানি গ্রহণ, শ্বাস-প্রশ্বাস, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার, রক্তচাপ, নাড়ির স্পন্দন, রক্তে ক্যালসিয়ামের সমতা, খাদ্য গ্রহণ, শরীরের ওজন ও ডিমের উৎপাদন হ্রাস পায়। ১৫ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এদের উৎপাদন সর্বোচ্চ।

২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে শতকরা ৪ ভাগ হারে পানি গ্রহণ বৃদ্ধি পায়। ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পর থেকে ডিমের সংখ্যা না কমলেও প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ডিমের ওজন শতকরা এক ভাগ হারে কমে যায়।

আরও পড়ুন: মুরগির খুসখুসে কাশি ও শ্বাসকষ্ট, জানুন সমাধান

২৬.৫ সেলসিয়াস ডিগ্রি তাপমাত্রার পর থেকে মোরগ-মুরগির খাদ্যের রূপান্তর ক্ষমতা হ্রাস পায়। ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে প্রতি ডিগ্রি তাপ বৃদ্ধিতে ২ থেকে ৪ শতাংশ খাবার গ্রহণ কমে যায়। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মোরগ-মুরগির জন্য অসহনীয় এবং ৩৮ ডিগ্রির পর মৃত্যু হার খুব বৃদ্ধি পায়।

তাপজনিত ধকল প্রতিরোধ
খামারের আশেপাশে ছায়াযুক্ত বৃক্ষ রোপণ এবং ঘর পূর্ব-পশ্চিমে হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনায় বায়োসিকিউরিটির কথা চিন্তা করে গাছপালা রোপণের প্রতি অনুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। গরমে পোল্ট্রি শেডে প্রত্যক্ষ সূর্যালোক পরা যাবে না। অত্যধিক গরম প্রতিরোধে প্রয়োজনে শেডের ছাদে বা টিনের চালায় দিনে দু’তিন বার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

টিনের নিচে চাটাই বা হার্ডবোর্ড দিয়ে সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক সময় মুরগি যখন হাঁ করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় তখন ঘরে সেপ্র মেশিন দিয়ে কুয়াশার মত করে পানি ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পানির ড্রিংকার ও ফিডারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ঘন ঘন ড্রিংকারের পানি পাল্টাতে হবে। গরমে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে শেডের মেঝে অনেক সময় স্যাঁতসেঁতে হয়ে লিটার দ্রুত ভিজে যায়। ফলে রোগের আক্রমণও বাড়ে।

আরও পড়ুন: নতুন দেশি মুরগি উদ্ভাবন, ৮ সপ্তাহে কেজি

সেজন্য প্রতিদিন সকালে ব্রয়লার শেডের লিটার উলোট-পালোট করা প্রয়োজন। লিটারে গুঁড়ো চুন ব্যবহার করলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। শেড থেকে শেডের দূরত্ব ৩০ ফুটের বেশি হলে ভালো হয়। শেডে মোরগ-মুরগির ঘনত্ব বেশি হলে তা কমিয়ে দিতে হবে। বাতাসের অবাধ চলাচল শেডের ভেতরের তাপমাত্রা শীতল রাখতে সাহায্য করবে এবং পোল্ট্রির জন্য ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাসমুক্ত রাখবে। শেডে স্টেন্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।

খাবার ব্যবস্থাপনা
ঠান্ডা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। যেহেতু তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এদের খাদ্য গ্রহণ কমে যায়, সেহেতু প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ৮ থেকে ১০ ভাগ শক্তি কমিয়ে প্রোটিন, খনিজ লবণ ও ভিটামিন বাড়িয়ে দিতে হবে।

প্রতি লিটার পানিতে ১০-১২ গ্রাম গ্লুকোজ ও মুরগি প্রতি ১০ গ্রাম ভিটামিন সি পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাকৃতিক বিটেইনে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আছে যা কোষের মধ্যে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে।

ফলে হিট স্ট্রোকের হাত থেকে এরা রক্ষা পায়। গরমে পোল্ট্রির অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা বেড়ে যায়। বিটেইনে মিথাইল মূলক বিদ্যমান, যা মিথিওনিন ও কলিনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। গরমে প্রয়োজনে একদিনের বাচ্চার জন্য পানিতে আখের গুড়, ভিটামিন-সি অথবা ইলেকট্রোলাইট যুক্ত স্যালাইন পানি দিতে হবে। পরামর্শমূলক লেখক: ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ