নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের অধীনে ২০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা দেশে কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএসই। তবে, এসব যন্ত্র কিনতে কৃষকরা ব্যাংকঋণ পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ধান আবাদে সবচেয়ে বেশি আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। জমি চাষ ও সেচে ৯৫ শতাংশই হয় যন্ত্রের মাধ্যমে। এ ছাড়া ধান মাড়াই, খেতের আগাছা পরিষ্কার ও কীটনাশক ছিটানোর কাজও প্রায় শতভাগ যন্ত্রে হচ্ছে। তবে ধান রোপণ, কাটা, মাড়াই-ঝাড়াইয়ে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার এখনো অনেক কম।

প্রতিটি কম্বাইন্ড হারভেস্টারের দাম ২৮ থেকে ৩০ লাখ টাকা। সরকার ১৪ থেকে ১৮ লাখ টাকা দিচ্ছে কৃষককে। বাকি টাকা কৃষকের। এসিআই মটরস, আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ, মেটালসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এসব যন্ত্র বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কৃষককে ছয় থেকে ৯ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়ে মেশিন বিক্রি করছে। এই টাকা কৃষক দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে পরিশোধ করছে। তবে, কৃষকরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ব্যাংকঋণ মিলছে না।

আরোও পড়ুনব্রি’র উদ্ভাবিত কম্বাইন হারভেস্টার মিলছে অর্ধেক দামে

ফসল প্রসেসিং কাজে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এই উচ্চমূল্যের যন্ত্রের ব্যবহার মোট আবাদি জমির মাত্র ১০ শতাংশ। তবে এই যন্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ধান রোপণ, কর্তন ও মাড়াই-ঝাড়াইয়ে কম্বাইন্ড হারভেস্টারের ব্যবহার ছিল সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ।

ডিএসইর তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের অধীনে ২০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা দেশে এক হাজার ৭৬২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৩৭৯টি রিপার, ৩৪টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় দুই হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, বোরো মৌসুমে এসব যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ে। আগামী বোরো মৌসুমের আগে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়তে পারে। এরই মধ্যে হাওর অঞ্চলে ৬৫ শতাংশ জমিই চাষাবাদ হচ্ছে কৃষির আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক বেনজীর আলম বলেন, ‘ভবিষ্যতে কৃষিকাজের শ্রমিক একেবারেই পাওয়া যাবে না। তাই দ্রুত আধুনিকায়নের দিকে যাচ্ছি আমরা। এ জন্য প্রতিবছর বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৯৬০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

আরোও পড়ুন: ৭০% ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি বা কম্বাইন্ড হারভেস্টার কিনবেন যেভাবে

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম জিয়াউদ্দিন বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ফলে ফসলের নিবিড়তা ৫ থেকে ২২ শতাংশ বেড়ে যায়। যন্ত্র দিয়ে মাঠে ফসল বুনলে বীজ ২০ শতাংশ সাশ্রয়ের পাশাপাশি সার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সাশ্রয় হয়। অন্যদিকে ফসলের উৎপাদনও ১২ থেকে ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যাতে কৃষকের মোট আয় বেড়ে যায় ২৯ থেকে ৪৯ শতাংশ। প্রকল্পসংশ্নিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পের আওতায় ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ