নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: উচ্চ ফলনশীল রোগমুক্ত ও মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করার লক্ষ্যে ৪৩৯ কোটি টাকার বীজ বর্ধন খামার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচন ও উপকূলীয় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বীজ বর্ধন খামার গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ খামার বিএডিসি’র সক্ষমতাও বাড়াবে।

সূত্র জানিয়েছে, ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চরাঞ্চলে ৬২৬ দশমিক ৩৯ একর জমিতে বীজ বর্ধন খামারটি বানাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।  এ লক্ষ্যে প্রায় ৪৩৯ কোটি টাকার ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বীজ বর্ধন খামার স্থাপন’ প্রকল্পটি মঙ্গলবার (২২ মার্চ) একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন পেয়েছে।

পড়তে পারেন: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কলমের কাঁঠাল গাছ বিএডিসিতে

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের চরাঞ্চলে শস্য বিন্যাস ও শস্য নিবিড়তা বাড়বে। এতে ধান ও অন্যান্য ফসলের আরও প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন সম্ভব হবে। জনপ্রিয় স্থানীয় জাতের বিশুদ্ধকৃত ২ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন এবং মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষাবাদ সম্প্রসারণও হবে ।প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করে ১৮ একর ভূমি উন্নয়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ বিষয়ে ৬৫০ জন কৃষক, বীজ ডিলার ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ৫৮৫টি মাঠ প্রদর্শনী করা হবে।

পড়তে পারেন: বিএডিসির বীজে ৪৫ টাকা খরচ করে কৃষক পাচ্ছেন ৩৮ টাকা

২২৬টি খামার যন্ত্রপাতি, ২ হাজার ৩৬০টি বীজ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রপাতি, ৪২টি আবহাওয়া সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে। ১৫১ বর্গমিটার আকারের তিনটি গার্ডরুম, কর্মচারী বা শ্রমিকদের জন্য ১৫৫ বর্গমিটার টিনসেড আবাসিক ভবন, ১ হাজার ৩৯২ বর্গমিটার অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে।

একহাজার বর্গমিটার বীজ গুদাম, ট্রানজিট গুদাম, ৩০০ বর্গমিটার ক্লিনিং কাম গ্রেডিং মেশিন রুম, ২০০ বর্গমিটার উপকরণ সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হবে। ৪ হাজার ৮০০ বর্গমিটার সানিং ফ্লোর, ১ হাজার ৬০২ বর্গমিটার কাভার্ড থ্রেসিং ফ্লোর, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার ওপেন থ্রেসিং কাম সানিং ফ্লোর, ১০০ বর্গমিটার ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শেড ও ৬০০ বর্গমিটার গো-শালা নির্মাণ করা হবে।

পড়তে পারেন: বীজ আলু সংরক্ষণের কয়েকটি কৌশল

প্রকল্পের আওতায় জেনারেটর রুম ও সাবস্টেশন, মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র, প্রবেশ রাস্তা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, হেরিং বোন ও মাটির রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, কাঁটাতারের বেড়া, প্রধান গেট ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা গেট, ৫টি বক্স কালভার্ট, ২৬টি ক্যাটল ক্রসিং ও ৭টি স্লুইচ গেট, বিভিন্ন সেচ অবকাঠামা, নলকূপ, হেডার ট্যাংক/হ্যান্ড টিউবওয়েল, স্প্রিংকলার ইরিগেশন স্থাপন করা হবে।

জানতে চাইলে ফেনী বিএডিসি’র উপপরিচালক (বীজ উৎপাদন) সৈয়দ সারোয়ার জাহান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ফেনীর সোনাগাজীতে ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যায়ে যে বীজ বর্ধন খামার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া এ অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন ও উপকূলীয় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে। এছাড়া আপনারা জানেন- উচ্চ ফলনশীল রোগমুক্ত ও মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন লক্ষ্যে বীজ বর্ধন খামার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যা বিএডিসিকে আরেকধাপ সামনে এগিয়ে নেবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের আরএডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, এ ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করার পথে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে।

এগ্রিকেয়ার/এইএইচ