নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট চলতি সংকটের সময়ে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সানেমের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষি খাতের জন্য চারটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেন। যার মধ্যে প্রথমটি হলো ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ দেয়ার ব্যাপারে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটি সুদমুক্ত ঋণ করা দরকার বলে মনে করে সানেম।

গতকাল বুধবার সানেম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানানো হয়েছে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা জোরালোভাবে এ দাবি আবার তুলে ধরছি। এখন যখন খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি খুবই জরুরি, কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষকরা যাতে সুদমুক্ত ঋণ পান এবং প্রকৃত কৃষকরা, যাদের দরকার, তাদের কাছে যেন ঋণ পৌঁছে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

দ্বিতীয় পরামর্শে বলা হয়েছে, শুধু ঋণ দিলে হবে না। আমরা দেখছি যে এ সংকট ও লকডাউনের কারণে কৃষি উপকরণের যে সাপ্লাই ব্যবস্থা সেটি বিঘ্নিত হচ্ছে কিনা। সুতরাং, কৃষকরা যাতে কৃষি উপকরণ ঠিকমতো পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় কৃষি শ্রমিকদের স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে, বিশেষ করে লকডাউনের কারণে কৃষি শ্রমিকদের চলাচল স্থবির হয়ে গেছে। কৃষি উপকরণ ও কৃষি শ্রমিকদের এ সমস্যা সমাধান করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় ব্যবসায়ী এমনকি কৃষি শ্রমিকদের যে নেটওয়ার্ক আছে, তাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হেলথ প্রটোকল তৈরি করে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে শস্য তোলার পর কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করে সানেম। তারা বলছে, অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, ফসলের আবাদ হওয়ার পর কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পান না। মাঝখানে থাকে মধ্যস্বত্বভোগীরা। যখন ধানের দাম চালের দাম বাড়ে, সেটার সুবিধা পায় মিল মালিকরা, কৃষকরা কোনো বাড়তি মূল্য পান না। যেহেতু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটে এখন স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসন খুবই সক্রিয়, এজন্য এবার স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সরাসরি কৃষকদের থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনার উদ্যোগ নিতে হবে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে শস্য ক্রয়ের পরিমাণ অনেক বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে কৃষকরা উপকৃত হন এবং কৃষকরা যেন এই মূল্য পেতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারি গুদামগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। তাতেও যদি না হয়, আমি মনে করি ব্যক্তি খাতে যে গুদামগুলো আছে, সরকারের উচিত হবে সেগুলো ভাড়া নেয়া।

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ সংকটের সময়ে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে কৃষকরা উপকৃত হন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ উদ্যোগগুলো নেয়া হলে আমরা খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে যে চিন্তিত, আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তার জন্য কৃষি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, সেদিকটা আমরা নিশ্চিত করতে পারব। নীতিনির্ধারকদের কাছে সানেমের পক্ষ থেকে এ সুপারিশগুলো ভেবে দেখারও আহ্বান জানানো হয়।