মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ইলিশসম্পদ সংরক্ষণে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রজননক্ষত্রের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সকল প্রকার মাছ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়বিক্রয় সরকার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

‘মৎস্যসংরক্ষণ আইন’ অনুযায়ী প্রতিবছরের মতো এ বছরেও মোট ২২দিন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এসময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ১ থেকে ২ বছর মেয়াদে জেল অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। একই অপরাধ ২ বার করলে শাস্তি দ্বিগুণ হবে।

ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০১৮ উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বুধবার (৩ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ১১ শতাংশের অধিক লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভরশীল অর্থাৎ ৫ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত এবং ২০-২৫ লাখ মানুষ ইলিশের পরিবহণ, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে নানাভাবে জড়িত।

ইলিশের জাটকানিধরোধে প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে ৮ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি সাইজের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইলিশের ব্যাপক উৎপাদনবৃদ্ধি ও সহজলভ্যতার জন্য জাটকা ও মা-ইলিশ নিধনরোধের এসব কর্মসূচি ব্যাপকভাবে ফলপ্রসু হয়েছে।

তাই মেঘনা হতে জাটকামাছ এখন পদ্মা, মহানন্দা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা ও সুরমানদীতেও বিস্তৃতিলাভ করেছে। বিশেষ করে পদ্মানদীর দু’পাড়ের জেলাসমুহ যেমন ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী এবং যমুনানদীর তীরবর্তী জেলা সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও কুড়িগ্রামে প্রচুর ইলিশমাছ ধরা পড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার জনক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে: মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী হতে হাইতকান্দী পয়েন্ট, তজুমুদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দীন হতে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট, কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট এবং কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া হতে গণ্ডামার পয়েন্ট।

এছাড়াও চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা,  পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরিয়তপুর, ঢাকা, মাদারীপউর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী , মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলার সকল নদ-নদীতে এসময় সকলপ্রকার মাছধরা বন্ধ থাকবে।

তবে এর বাইরের অন্যান্য পুকুর-বিল বা হাওরবাওর ও জলাশয় মাছধরার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়াও দেশের সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এবং মোহনাসমূহেও এই ২২দিন সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এমনকি দেশের সকল মাছঘাট, আড়ত, হাটবাজার, চেইনশপসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় এই ২২দিন মোবাইলকোর্টসহ অভিযানও পরিচালিত হবে।

মন্ত্রী জানান, ইলিশের জাটকাকে বড় ইলিশে পরিণত করার লক্ষে দেশে ৬টি ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার।

তা হচ্ছে- চাঁদপুর জেলার ষাটনল হতে লক্ষীপুর জেলার আলেকজান্ডার (মেঘনানদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার) পর্যন্ত, ভোলা জেলার মদনপুর/চর ইলিশা হতে চর পিয়াল (মেঘনানদীর শাহবাজপুর শাখানদীর ৯০ কিমিঃ) পর্যন্ত, ভোলাজেলার ভেদুরিয়া হতে পটুয়াখালী জেলার চ্চর রুস্তম (তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিঃমিঃ) পর্যন্ত, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার সমগ্র আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিঃমিঃ পর্যন্ত, পরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলাস্থ পদ্মানদীর ২০ কিঃমিঃ পর্যন্ত এবং বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বরিশালসদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনানদীর প্রায় ৮২ কিঃমিঃ পর্যন্ত এলাকা।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মণ্ডল, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোঃ শাহ আলম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।