মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক চাতাল। দিন-রাত এসব চাতালে চলছে কাঁচা হলুদ প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। চাতালে ভাল মানের কাঁচা হলুদ প্রতিমণ ৮০০ থেকে ১২’শ টাকায় কেনা হচ্ছে। শুকানোর পরে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়।

কাঁচা হলুদ কেনা, সেদ্ধ, শুকানো ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শত শত কৃষক-কৃষাণী। হলুদের সোনা রঙে জীবনের রঙ বদলে যাচ্ছে তাদের। বিগত কয়েক বছর হলুদের ভালো দাম পাওয়ায় ঝুঁকছেন হলুদ চাষে। তুলনামূলক খুবই কম খরচ ও পরিশ্রমে মিলছে কয়েকগুণ লাভ। কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, সমতল ও চরাঞ্চল এলাকায় হলুদ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে চাষিরা।

কৃষকরা জানান, ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা খরচে প্রতি শতাংশ জমিতে হলুদ চাষ করা সম্ভব। ফলন হয় ৩ থেকে ৪ মণ। কাঁচা হলুদ জমি থেকে সংগ্রহ করার পর বাজারে বিক্রি করলে প্রতিমণ হলুদ বিক্রি হয় ৮’শ থেকে ১২’শ টাকা। কিন্তু একই হলুদ ধান সিদ্ধ করে চাল প্রক্রিয়াজাত করার মতো শুকানো হলে প্রতিমণ হলুদ বিক্রি হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এতে লাভবান হওয়ায় কাঁচা হলুদ বিক্রি না করে শুকানোর প্রতি মনোযোগ বেশি এখানকার হলুদ চাষিদের।

আরোও পড়ুন: জেনে নিন হলুদ চাষের সঠিক পদ্ধতি

অপরদিকে, হলুদ সংগ্রহের কাজে লাগে বেশ কয়েকজন করে শ্রমিক। সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হলুদ উত্তোলনের কাজে প্রত্যেক শ্রমিক মজুরি পান ৩০০ টাকা। হলুদের জমিতে কাজ করে দিনমজুর ও শ্রমিকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলার বাউসা গ্রামের একটি আম বাগানে হলুদ চাষ করেছেন উদ্যোমী যুবক আব্দুল ওহাব। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি চাষাবাদও করেন। তিনি বলেন, “এ বছর প্রায় তিন বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করেছি। এর মধ্যে এক বিঘা আম বাগানে হলুদ লাগিয়েছি। সাধনা ও শ্রম দিয়ে চাষাবাদ করলে যে কোন আবাদে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব।”

আব্দুল ওহাব জানান, ১১ হাজার টাকার বীজ কিনে হলুদ রোপণ করেন তিনি। হলুদের গাছ গজানোর সময় দুয়েকবার সেচ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সামান্য রাসায়নিক সার ছাড়া তেমন কিছুই প্রয়োগ করেননি। এতে তার যে পরিমান হলুদ উৎপাদন হয়েছে, তাতে খরচের তুলনায় দশ গুন বেশি টাকা আয় হবে।

বিগত সময়ে চরের মাটিতে কখনোই হলুদের চাষবাদ করেননি। কিন্তু গত বছর হলুদ আবাদিরা বাম্পার ফলন ও ব্যাপক দাম পাওয়ায় তিনি হলুদ চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এবার প্রায় বিঘা দুয়েক উচু জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষক বাবলু দেওয়ান।

আড়ানী পৌর এলাকার বাসিন্দা ও পৌর কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক রাজ, নওটিকার আলাল হোসেন, আমোদপুর গ্রামের শাজাহান আলীসহ আরো অনেকেই জানান, সরকার বাজারে হলুদের ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে দেশে কখনোই হলুদের সঙ্কট পড়বে না। বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে যে পরিমান আমবাগান রয়েছে, এগুলোতে হলুদ চাষ করা হলে দেশের চাহিদা পুরণের পর বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব।

হলুদের সম্ভাবনা নিয়ে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি হলুদ চাষ ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ব্যাপারে দিয়েছেন নানান পরামর্শ। সম্প্রতি নিজ বাড়ির পাশের কয়েকটি চাতাল পরিদর্শনও করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বাঘা উপজেলার মাটি হলুদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ধারণা করা হচ্ছে উপজেলায় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ হয়েছে। হলুদ চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিতে উপজেলা কৃষি দপ্তর সদা প্রস্তুত।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ