খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাফল্য রয়েছেন অনেক। বর্তমানে ধানের পর গম এবং ভুট্টা যথাক্রমে বাংলাদেশের ২য় ও তয় গুরুত্বপূর্ণ ফসল। ধানের পরেই গমের অবস্থান। গমের বহূমখী ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে দেশে গমের চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলেছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্য ও পদক্ষেপের কারণে ত্বরান্বিত গম গবেষণা কর্মসুচীর মাধ্যমে দেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে গম গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়।



সর্বশেষ ২০১৭ সালে আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এর যাত্রা শুরু হয়। গম ও ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত এবং উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন, পোকা মাকড় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনাসহ কৃষি যন্ত্রপাতি, শস্য সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা করা এবং উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তি সমূহ হস্তান্তর করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

গম গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সাফল্ল্যের মধ্যে অন্যতম হলো স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যেখানে ১ লাখ হেক্টর জমিতে ১ লাখ টন গম উৎপন্ন হতো, সেখানে বর্তমানে ৩.৫ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় ১২ লাখ টন গম উৎপন্ন হচ্ছে। শতকরা প্রায় একশত ভাগ আবাদকৃত জমিতে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত গমের জাত আবাদ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৩ উচ্চফলনশীল গমের জাত ও অনেকগুলি লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় জাতসমূহ হলো বারি গম ২৫ (তাপ ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু) বারি গম ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ (তাপ সহিষ্ণু)। সর্বশেষ বারিগম ৩৩ জাতটি তাপ সহনশীল ও ব্লাস্ট রোগ  প্রতিরোধী এবং জিংক সমৃদ্ধ (এরমধ্যে৫০-৫৫ পিপিএম জিংক থাকে)।

অতি সম্প্রতি গমের একটি নতুন জাত অবমুক্তির জন্য জাতীয় বীজ বোর্ড এর কারিগরী কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। অন্যান্য উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহের মধ্যে রয়েছে গমের ব্লাস্ট রোগ ও এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, গম-ভুট্টা-আমন ধান ফসল ধারায় স্বল্পচাষ ও মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উপকুলীয় লবণাক্ত এলাকায় গম উৎপাদন, হালকা বুনটের মাটির জন্য লাভজনক ফসল-ধারাঃ আগাম আলু-গম-মুগডাল-আমন ধান, হালকা বুনটের মাটির জন্য অধিক লাভজনক ফসল-ধারাঃ আগাম আলু-গম-ভুট্টা-আমন ধান।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বীজশিল্প

ধানের তুলনায় ভুট্টা সেচ সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও অধিক ফলনশীল। অত্র  প্রতিষ্ঠানের ভুট্টা শাখা কর্তৃক উদ্ভাবিত খই ভুট্টা অত্যন্ত সমাদৃত। তাছাড়া ভুট্টা শাখা কর্তৃক এ পর্যন্ত ১৬টি হাইব্রিড জাত উদ্ভাবিত হয়েছে যার মধ্যে ৫টি প্রতিকূলতা সহনশীল ও ১টি কোয়ালিটি প্রোটিন সমৃদ্ধ।

এসকল জাতসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১২ (খরা সহিষ্ণু), বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৩ (তাপ ও খরা সহিষ্ণু), বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৪, ১৫ (তাপ সহিষ্ণু), বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৬ (তাপ ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু, স্বল্প উচ্চতা সম্পন্ন জাত যা ঝড়ো বাতাসে ভেঙ্গে পড়েনা)।

অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে ভুট্টার নতুন হা্ইব্রিড জাতগুলি কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারাদেশে প্রদর্শনী স্থাপনের কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।

মান সম্পন্ন বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে গম ও ভুট্টার ফলন বৃদ্ধির ব্যাপারে অত্র প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক গমের ৫০০ টন ও ভুট্টার ৯ টন ব্রিডার বীজ বিএডিসি ও বিভিন্ন বীজ কোম্পানীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে এবং গম ও ভুট্টার ৪০০ টন মানসম্পন্ন বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

তাছাড়া প্রতিবছর অত্র ইনস্টিটিউট থেকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় ১২০০ জাত প্রদর্শণী স্থাপন করা হয়ে থাকে।

আশা করা যায় নব প্রতিষ্ঠিত এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আগামীতে গম ও ভুট্টার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশে গম ও ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি তথা খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে বিশেষ অবদান রাখবে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাফল্য সংবাদটি বীজ মেলায় প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর কাছে তুলে ধরেন।